বাংলায় সুফিবাদের আগমন এবং ইসলাম
সুফিবাদ কি?
সুফিবাদ একটি
আধ্যাত্মিক দর্শন। একে
তাসাওউফ বলেও অভিহিত
করা হয়। এই
দর্শনে আত্মা সম্পর্কিত আলোচনা
হচ্ছে মুখ্য বিষয়।
আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে
সম্পর্ক স্থাপন হলো
এই দর্শনের মর্মকথা।
সুফিদের মতে,
আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে
অবস্থান করা) এবং
ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে
স্থায়িভাবে বিলীন হয়ে
যাওয়া) লাভ করা
যায়। এই সাধনাকে ‘তরিকত’
বা আল্লাহ-প্রাপ্তির পথ
বলা হয়। তরিকত
সাধনায় আবার একজন
মুর্শিদের প্রয়োজন হয়।
সেই পথই হলো
ফানাফিল্লাহ। ফানাফিল্লাহ হওয়ার
পর বাকাবিল্লাহ লাভ
হয়। বাকাবিল্লাহ অর্জিত
হলে সুফি দর্শন
অনুযায়ী সুফি আল্লাহ
প্রদত্ত বিশেষ শক্তিতে শক্তিমান হন
এবং অজস্র কারামত
প্রদর্শনের অধিকারী হন
।
এই সুফিবাদ উৎকর্ষ
লাভ করে পারস্যে। সেখানকার সুফি-দরবেশ এবং
কবি-সাহিত্যিকগন তাদের
বিভিন্ন কাব্য ও
পুস্তক রচনা করে
এই দর্শনকে সাধারণের নিকট
জনপ্রিয় করে তোলেন।
কালক্রমে ওলীদের অবলম্বন করে
নানা তরিকা গড়ে
ওঠে। সেগুলির মধ্যে
চারটি প্রধান তরিকা
সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ
করে:
১) বড়
পীর হযরত আব্দুল
কাদির জিলানী প্রতিষ্ঠিত কাদেরিয়া তরিকা,
২) খাজা মু’ঈনুদ্দীন চিশতি প্রতিষ্ঠিত চিশতিয়া তরিকা,
৩) খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী প্রতিষ্ঠিত নকশবন্দিয়া তরিকা এবং
৪) শেখ আহমদ মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী সারহিন্দী প্রতিষ্ঠিত মুজাদ্দিদিয়া তরিকা।
২) খাজা মু’ঈনুদ্দীন চিশতি প্রতিষ্ঠিত চিশতিয়া তরিকা,
৩) খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী প্রতিষ্ঠিত নকশবন্দিয়া তরিকা এবং
৪) শেখ আহমদ মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী সারহিন্দী প্রতিষ্ঠিত মুজাদ্দিদিয়া তরিকা।
এছাড়া সুহ্রাওয়ার্দিয়া, মাদারীয়া, আহমদিয়া ও
কলন্দরিয়া সহ আরও
বেশ কয়েকটি তরিকার
উদ্ভব ঘটে।
বাংলায় সুফিবাদঃ
বাংলায় সুফিবাদের আবির্ভাবকাল সঠিকভাবে বলা
কঠিন।
তবে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে
সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এদেশে
সুফিবাদের সর্বাধিক প্রচার
ও প্রসার হয়েছে
বলে জানা যায়।আরব, ইয়েমেন, ইরাক,
ইরান, মধ্য এশিয়া
ও উত্তর ভারত
থেকে সুফিরা এসে
বঙ্গদেশে সুফিবাদ প্রচার
করেন।
তাদের মৃত্যুর পর কিছু অতিভক্তগন কর্তৃক প্রচলিত হয়ে যায় যে তারা বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, লিখা হয় বিভিন্ন গাঁজাখুরি কিচ্ছা কাহিনি যা ইসলামের সাথে সরাসরি বিরোধ করে ও তারা নাকি আমাদের প্রিয় রাসুল (সাঃ) এবং সাহাবাদের (রাঃ) থেকেও বেশি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, এই সব কথা লিখা হয়েছে তাদের বই গুলোতে এবং তাতে স্পষ্ট শিরক ও কুফর লক্ষ্য করা যায়। http://www.quraneralo.com/sufism-in-bangladesh/?utm_source=feedburner&utm_medium=email&utm_campaign=Feed%3A+quraneralo+%28QuranerAlo.com+-+%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%B0%27%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0+%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8B%29
সুফিদের চালচলন,
মানবপ্রেমের ইত্যাদির কারণে
এদেশের সাধারণ কিছু
মানুষ সুফিবাদের প্রতি
আকৃষ্ট হয়ে ওঠে
। এভাবে ক্রমশ
বঙ্গদেশে সুফিবাদ প্রসার
লাভ করে। ১২০৪-৫ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজী
কর্তৃক বাংলাদেশ বিজিত
হলে ইসলামের শরীআত
ও মারিফত উভয়
ধারার প্রচার ও
প্রসার তীব্রতর হয়।
শাসকশ্রেণীর সঙ্গে বহু
পীর-দরবেশ এদেশে
আগমন করে নিজস্ব
তরীকায় ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন।
এরা নিজ রচিত
সুফিবাদের আধ্যাত্মিক তত্ত্ব
চমৎকারভাবে তুলে ধরে
সাধারণ কিছু মূর্খ
মানুষকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেন,
ফলে বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে
এই মতবাদ প্রসার
লাভ করে। সুফিগণ
নিজেদের রচিত বিভিন্ন তরীকা
এবং মানুষের মাঝে
প্রেম-ভ্রাতৃত্ব-সাম্যের মধুর
বাণী প্রচার করে
জাতি-ধর্ম-বর্ণ
নির্বিশেষে এদেশের কিছু
সাধারণ মানুষের মন
জয় করতে সক্ষম
হন ।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ লোকমুখে কিংবদন্তি-পুরুষে পরিণত হয়েছেন। এদের অনেকের মাযার তৈরি হয়েছে, যেগুলোকে পবিত্র ও পুণ্য স্থান বিবেচনা করা হয় । এমন কি কেউ কেউ নিয়মিত যিয়ারত করে ও পার্থিব কামনা-বাসনায় মানত করে, মাজারে টাকা পয়সা, ফুল , মোমবাতি , আগরবাতি ইত্যাদি দেয়াকে ছওয়াব মনে করে ! এই সুফিবাদ দ্বারা পরবর্তীতে বৈষ্ণবধর্ম, লৌকিক মরমিবাদ, বাউল ধর্মমত ও অন্যান্য ভক্তিবাদও কমবেশি প্রভাবিত হয়।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ লোকমুখে কিংবদন্তি-পুরুষে পরিণত হয়েছেন। এদের অনেকের মাযার তৈরি হয়েছে, যেগুলোকে পবিত্র ও পুণ্য স্থান বিবেচনা করা হয় । এমন কি কেউ কেউ নিয়মিত যিয়ারত করে ও পার্থিব কামনা-বাসনায় মানত করে, মাজারে টাকা পয়সা, ফুল , মোমবাতি , আগরবাতি ইত্যাদি দেয়াকে ছওয়াব মনে করে ! এই সুফিবাদ দ্বারা পরবর্তীতে বৈষ্ণবধর্ম, লৌকিক মরমিবাদ, বাউল ধর্মমত ও অন্যান্য ভক্তিবাদও কমবেশি প্রভাবিত হয়।
কিছু সাধারণ
মানুষের স্বাভাবিক জীবনেও
সুফিদের প্রভাব লক্ষ্য
করা যায়। যেমন
নদী ও সমুদ্রপথে যাতায়াতের সময়
কিছু মাঝিরা বদর
পীরের নাম স্মরণ
করে। শুধু তাই
নয়, নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে শহরের
কিছু যানবাহনে পর্যন্ত বিভিন্ন পীর-আউলিয়ার নাম
লেখা থাকে। লৌকিক
ধারার মুর্শিদি-মারফতি
গান, গাজীর গান
, গাজীকালু-চম্পাবতী কাব্য
ও অন্যান্য মরমীসাহিত্য, মাদার
পীর ও সোনা
পীরের মাগনের গান
ইত্যাদি বিভিন্ন পীর-দরবেশকে কেন্দ্র করে
রচিত। এভাবে বাংলায় কিছু
মানুষের ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও
বৈষয়িক জীবনের নানা
ক্ষেত্রে সুফিবাদের প্রভাব
দেখা যায় ।
কিন্তু
এই সুফিবাদের সাথে না আছে কোরআনের কোন সম্পর্ক, না আছে হযরত রাসুলে কারিম (স) এর ৬৩ বছরের জীবনযাত্রার সম্পর্ক, আর না আছে নবীর অনুসারীদের জীবনযাত্রার সম্পর্ক ।
পরিশেষে অল্প কিছু কথা :
মুলত একটি
বিষয় আমাদের মনে
রাখতে হবে, এই
দেশে ইসলামের দাওয়াত প্রথমেই আল্লাহর কিতাব
থেকে হইনি, হয়েছে
সুফি দরবেশদের আমল-আখলাক, বেশ-ভুষা, সুন্দর
ব্যাবহার, মাধুর্যমণ্ডিত কাব্য-কথা ইত্যাদির মাধ্যমে ।
সুতরাং, এইসব বাহ্যিক দিক
গুলোয় আকৃষ্ট ও
প্রভাবিত হয়ে সাধারণ
কিছু মানুষ ক্রমান্বয়ে সুফিবাদে বিশ্বাসী ও
ভক্ত হয়ে ওঠে
এবং সেটা অন্ধ
বিশ্বাসে রুপান্তরিত হয়।
এরা বিভিন্ন তরীকায় বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং আল কোরআনের শিক্ষা তাদের কাছে গৌণ হয়ে যায় ।
তাই এসব থেকে মুক্তির একমাত্র পথ কোরআন আঁকড়ে ধরা এবং রাসুল (স) এর কোরআন বাস্তবায়ন পদ্ধতি দ্বারা জীবনকে ঢেলে সাজানো । এছাড়া
অন্যান্য তরীকায় চললে
কিয়ামতের মাঠে মুক্তি
কখনই মিলবেনা ।
আল্লাহ্ বলেন
"আর আমি অবতীর্ণ করেছি
তোমার উপর এমন
গ্রন্থ যেখানে রয়েছে
সকল বস্তুর বিস্তারিত বর্ণনা
বা জ্ঞান।" (সূরা আননাহল-৮৯)
"তোমরা
আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর
যাতে তোমরা কৃপা
লাভ করতে পার"
(সুরা আলে ইমরান-
১৩২)
"হে
মুমিনগণ! রাসূল যখন
তোমাদের এমন কিছুর
দিকে আহবান করে
যা তোমাদের প্রানবন্ত করে,
তখন আল্লাহ ও
রাসূলের আহবানে সাড়া
দিবে।" (সুরা আনফাল-
২৪)
আসুন, আমরা
সচেতন হই এবং
মুরুব্বী ও সাধকগনদের অধিক
সম্মান ও ভক্তি
দেখাতে গিয়ে যেন
শিরক না করে
বসি ।
“আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ অবশ্যই ক্ষমা করবেন না, কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা এর চেয়ে কম (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।” (সূরা আন
নিসা, ৪ : ৪৮)
আল্লাহ্ আমাদের
সকলকে হেদায়াত দান
করুন, আমীন ।
.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন