শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২

আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান?


আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান কথাটি অসংখ্য লোক বিশ্বাস করে থাকেন । কিন্তু কোরআন ও হাদীসে এমন অসংখ্য প্রমাণ আছে যে, আল্লাহ নিরাকার নন এবং তিনি সর্বত্র বিরাজমানও নন ।
 কোরআনের বর্ণনায় আল্লাহর হাত:কোরআনের বর্ণনায় আল্লাহ তাঁর হাতের কথা উল্লেখ্য করেছেন ।
হে রাসূল বলুন ! ধন-সম্পদ ও সম্মান আল্লাহর হাতে । [আল ইমরান ৭৩]
সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর, যাঁর হাতে বিশ্বের সকল বিষয়ের ক্ষমতা । তাঁর নিকট তোমদের সকলকে ফিরে যেতে হবে ।
আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল ? তুমি আহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ? [সুরা ছোয়াদ] ।
এখানে আল্লাহ তাঁর হাতের কথা বললেন । মানুষেরও হাত আছে, তাই বলে আল্লাহর হাত মানুষের হাতের মত, এই বিশ্বাস করা যাবে না । এই বিশ্বাস যদি কেউ করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে । বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহর হাত আছে, সেই হাতের তুলনা সৃষ্টি জগতে নেই । যেমন আল্লাহ তেমনই হবে আল্লাহর হাত । তার হাতের সম্পূর্ণ বিবরণ আমাদের জানা নেই । শুধু বিশ্বাস করব যে, আল্লাহর হাত আছে । যদি বিশ্বাস করি আল্লাহর হাত নাই তাহলে কুরআনের ঐ আয়াত অবিশ্বাস করা হয় । আর কুরআনের আয়াত অবিশ্বাস করলে মানুষ কাফের হয়ে যায় ।

নফস আরবী শব্দ । এর অর্থ হচ্ছে দেহ ।
সেদিন প্রত্যেকেই যা কিছু ভাল কাজ সে করেছে: চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং যা কিছু মন্দ কাজ সে করেছে তাও । ওরা তখন কামনা করবে, যদি তার ওবং ওসব কর্মের মধ্যে ব্যবধান দুরের হতে !
আল্লাহ তোমাদিগকে আপন নফসের ভীতি প্রদর্শন করছেন । আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু । [আল ইমরান ৩০]
আল্লাহ মানুষকে শাস্তি দিতে কারো মুখাপেক্ষী নন । তার দেহে যে শক্তি বিদ্যমান তা দিয়েই তিনি মানব জাতি ও নিখিল বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারেন । আল্লাহ মানুষকে সেই মহান শক্তির ভীতি প্রদর্শন করছেন ।
আবু যার [রা:] বলেন যে, রাসূল [সা:] বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “হে আমার বান্দাগন ! আমি আমার নফসের জন্য যুলুম হারাম করে রেখেছি ।’’ [মুসলিম আরবী মিশকাত ২০৩ পৃ:, মিশকাত বাংলা ৫ম পৃ: ১৩৩, হা: ২২১৮, এমদাদিয়া]
যার দেহ আছে তাঁর আকার আছে । এতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ নিরাকার নন ।

রূহ শব্দের অর্থ প্রাণ ।
আল্লাহর যে প্রাণ আছে কোরআনে তার বর্ণনা রয়েছে ।
আল্লাহর ফেরেশ্তদিগকে বলেন, “আদমকে সুঠাম করব, তারপর আদমের মধ্যে আমার রূহ প্রদান করব, অত:পর তোমরা তাকে সেজদা করবে। [হিজর ২৯]
এই আয়াতে প্রমাণ হল আল্লাহর রূহ আছে ।
উপরের আলেচনা থেকে প্রমাণ হল আল্লাহর আকার আছে । আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান কথাটি মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য নীচের আয়াতগুলোর প্রতি লক্ষ্য করুন ।
তিনি পরম দয়াময়, আরশে সমাসীন হয়েছেন । [তোয়া হা ৫]
যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।“ [মুমিন ৭]
এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আট জন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের উর্ধ্বে বহন করবে। [হাক্ক্ ১৭]
উপরের আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে আল্লাহ আরসে সমাসীন আছেন । তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন । তবে তার জ্ঞান সর্বত্র বিরাজমান । তিনি সবকিছু দেখেন ।

আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান কথাটি হিন্দু ধর্ম হতে এনে ইসলাম শিক্ষার মধ্যে ঢুকানো হয়েছে ।
নিম্নে তার প্রমাণ দেয়া হল:
মাধ্যমিক হিন্দু ধর্ম শিক্ষা
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও টেকস্টবুক, ঢাকা ।
চতুর্থ পাঠ ঈশ্বরবাদ ২৩, ২৪, ২৫ পৃষ্ঠা ।
ব্রহ্ম ঈশ্বর । তিনি এক অদ্বিতীয় । তিনি নিরাকার ও সর্বব্যাপী । বইটিতে হিন্দু ছাত্রদিগকে হিন্দু ধর্ম থেকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, সেটা তাদের ব্যাপার । কিন্তু আমরা দেখছি ইসলাম শিক্ষা বইটিতে কোমলমতি মুসলিম ছাত্রদেরকে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা দেয়া হচ্ছে ইসলাম শিক্ষার নামে ।
ব্রহ্ম ঈশ্বর । তিনি এক অদ্ধিতীয় । তিনি নিরাকার, সর্বব্যাপী ।
এই বইটি হিন্দু ছাত্রদিগকে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা দিয়েছে । অবশ্য হিন্দু ধর্ম শিক্ষার লেখকগণ; ঐ কথাগুলির বরাত বেদ হতে দিয়েছে । কিন্তু ইসলাম শিক্ষার লেখকগণ আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান এই কথাটি কোথায় পেলেন তার কোন বরাত দেননি । এতে প্রমান হয় ইসলাম শিক্ষার লেখকগণ হিন্দু ধর্মের শিক্ষাকে ইসলামের শিক্ষা বলে চালিয়ে দেবার অপচেষ্ট করেছেন ।

এই অপচেষ্টার কারণ কি ? অন্যদিকে তথাকথিত একদল মুসলমান বলে থাকেন আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান, এ কথাটি একটি খাঁটি মিথ্যা কথা । এ কথার কোন দলিল কুরআন এ হাদীসে নেই । মানুষের আমল বিশুদ্ধ হবার পূর্বশর্ত হল বিশুদ্ধ ঈমান । সূরায়ে নাহল ৯৭, বনি ইসলাইল১৯ । ঈমান বিশুদ্ধ না হলে আমল যতই বিশুদ্ধ হোক তা কবুল হবে না । যেমন- নামাজ বিশুদ্ধ হবার পূর্বশর্ত হল অজু । অজু শুদ্ধ না হলে নামাজ হবে না । ঈমানের মধ্যে সর্বপ্রথম হলো আল্লাহর উপর ঈমান । সেই আল্লাহর উপর ঈমাণ যদি বিশুদ্ধ না হয়, তাহলে অন্যান্য আমল যত বিশুদ্ধ হোক, যেমন নামাজ, রোজা,হজ্জ, যাকাত কোনটাই কবুল হবে না ।

আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজান কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা । এই বিশ্বাস ঈমানকে কলূষিত করবে, সারাজীবনের আমলকে বরবাদ করবে । তাই আমরা আল্লাহর আকার ও আল্লাহর সম্পর্কে কুরআন ও সহীহ হাদীসের বরতে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম । পাঠক কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষন করলে আমাদিগকে জানালে উপকৃত হব ।

কিছু লোক আছেন যারা আল্লাহর আকার অবিশ্বাস করেন । আল্লাহর আকার আবিশ্বাস করার অর্থ আল্লাহকে অবিশ্বাস করা । সাথে সাথে মনে রাখতে হবে সৃষ্টি জগতে যতকিছু আছে তার কোনটির আকারের সাথে আল্লাহর আকারের সাদৃশ্য নেই । যেমন- আল্লাহ বলেছেন :
قَاআল্লাহ বললেন, হে ইবলিস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল ? তুমি আহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ? [সুরা ছোয়াদ] ।
এখানে আল্লাহ তাঁর হাতের কথা বললেন । মানুষেরও হাত আছে, তাই বলে আল্লাহর হাত মানুষের হাতের মত, এই বিশ্বাস করা যাবে না । এই বিশ্বাস যদি কেউ করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে । বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহর হাত আছে, সেই হাতের তুলনা সৃষ্টি জগতে নেই । যেমন আল্লাহ তেমনই হবে আল্লাহর হাত । তার হাতের সম্পূর্ণ বিবরণ আমাদের জানা নেই । শুধু বিশ্বাস করব যে, আল্লাহর হাত আছে । যদি বিশ্বাস করি আল্লাহর হাত নাই তাহলে কুরআনের ঐ আয়াত অবিশ্বাস করা হয় । আর কুরআনের আয়াত অবিশ্বাস করলে মানুষ কাফের হয়ে যায় ।

কিছু লোক বলে থাকেন আল্লাহ যে হাতের কথা বলেছেন, তা বাস্তব হাত নয়, তা হল কুদরতের হাত । এ কথাটিও মিথ্যা । তাতেও আল্লাহর কুরআন অবিশ্বাস করা হয় । কারণ কুদরতী হাত বললে বাস্তব হাতকে আবিশ্বাস করা হয়, আস্বীকার করা হয়, সুস্থ হাতেই ক্ষমতা বা শক্তি থাকে । যদি বাস্তব হাত বিশ্বাস করা হয় তাহলে হাতের সাথে ক্ষমতা [কুদরত] ও বিশ্বাস করা হয় । কিন্তু যদি কেবল কুদরত [ক্ষমতা ] বিশ্বাস করা হয় তাহলে হাতকে বিশ্বাস করা হয় না । তাই যারা আল্লাহর হাতের অর্থ কুদরাত করেন, তারা বাস্তব হাতকে বিশ্বাস করেন না । আর এটাই হল কুফরী । বিশুদ্ধ বিশ্বাস হল আল্লাহর বাস্তব হাত আছে এবং সে হাতর অসীম ক্ষমতা আছে ।

কুরআনের আয়াতের এরূপ খমখেয়ালী অর্থ সর্ব প্রথম চালু করে জাহাম বিন সাফওয়ান নামক এক ব্যক্তি । সে খোরাসনের তিরমিয অন্চলের অধিবাসী ছিল । এরূপ খামখেয়লী অর্থ করার জন্য ১২০ হিজরীতে আদালত কর্তৃক মৃত্যুদন্ডপ্রপ্ত হয়ে মৃত্যু বরন করেন । তারীখ-তাবারী ৭ম খন্ড, ৩৩০ পৃষ্ঠা ।

বর্তমানে বই পুস্তকে, কুরআনের ভিবিন্ন তাফসীরের এরূপ বহু অর্থ পাওয়া যাচ্ছে । তা সবই বিভ্রান্তিকর ।
আমরা আল্লাহর কিতাব ও রাসুল [সা:] বিশুদ্ধ হাদীস মুতাবেক আল্লাহর আকার সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করছি । আমাদের এই পুস্তকটি পড়ার পর ক্ষেপে যাবেন কেবল তারা, যারা হিন্দুদের ধারণা বিশ্বাস স্থাপন করে আছেন । যারা কুরআন ও হাদীসের মধ্যে নিজেদের বক্তব্য ঢুকিয়ে কুরআন ও হাদীসের বিকৃতি ঘটাতে চান, অথবা আল্লাহর আকার সম্পর্কে অজ্ঞ ও মুর্খ থাকতে চান । অন্যদিকে যারা সস্তা ওয়াজ ও নসীহাত করে মানুষকে হাসিয়ে, কাদিঁয়ে, মিথ্যা কাহিনীর মধ্যমে ওয়াজের ময়দানকে সরগরম করে ফেলে, সেই সকল মিথ্যুক প্রতারক ওয়ায়েজগণ । তবে কুরআন হাদীসের অভিজ্ঞ কোন আলেম যদি আমাদের বর্ণনার ব্যাপারে কোন ভুল ধরতে পেরে থাকেন, তাহলে দলিল প্রমাণ সহ লিখিতভাবে প্রেরণ করবেন। অনুরোধ রইল কেবল মাত্র ভাবাবেগের বশে, বিনা দলিলে, আপন খেয়ালে, কোন বুজুর্গের কথা কষ্ট করে পাঠাবেন না, যারা কুরআনের অর্থ অবগত নয় । কমপক্ষে মেশকাত শরীফও আগাগোড়া পড়েনি । এমনকি ইসলামী আকাইদ সর্ম্পকে একখানা কিতাবও পড়েনি এমন বহু মাদ্রাসার শিক্ষক পীর ও তাবলীগের মুবাল্লিগের সাথে সাক্ষাত করেছি, সাধারণের নিকট বুজুর্গ বলে খ্যাত, কিন্তু ইসলামী জ্ঞানে তারা শূণ্য । এ ধরণের কাট হুজুরদের দলিল বিহীন কোন কথা কষ্ট করে পাঠাবেন না । অতীতের তথাকথিত কোন বুজুর্গের কথাও  পাঠাবেন না । কোন আয়াতের অর্থ যদি দ্বিমত পোষন করেন তাহলে প্রথমে আরবী ব্যাকরণ [সারফ, নাহু, বালাগাতের] দৃষ্টে এবং বিশুদ্ধ হাদীসের বরাতে তুলে ধরে পাঠাতে অনুরোধ করছি । হাদীস যেন যয়ীফ না হয়, মউযু না হয় । কোন ব্যাখ্যার বরাত যদি পাঠান তা যেন কোন মুকাল্লিদ ও সুফীর কিতান না হয় । এটাই হল আনুরোধ । যারা আরবী বুঝেন তাদের নিকট অনুরোধ তার যেন ইমাম বায়হাকী [রা:] এর কিতাবখানি পড়েন ও তা প্রচার করেন এবং আমাদের বর্ণনা তাঁর কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন