সাহাবায়ে কেরাম তাদের জীবনে হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ
করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর অনুসরণ করেছেন, তার নির্দেশ পালন করেছেন এবং ছোট-বড় প্রত্যেক
বিষয়ে তারা তার শরণাপন্ন হয়েছেন।
তারা রাসূলের এত অনুসরণ করতেন
যে, কোন কারণ ও হিকমত জানা ছাড়াই তিনি যা করতেন তারা তাই করত, তিনি যা পরিহার করতেন তারাও তা পরিহার করত। যেমন ইমাম বুখারি
ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি
বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একটি স্বর্ণের আঙটি
পরিধান করেছিলেন, ফলে লোকেরাও স্বর্ণের আঙটি পরিধান করে। অতঃপর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা এ বলে
নিক্ষেপ করেন: “আমি কখনো তা পরিধান করব না, ফলে
লোকেরাও তাদের আঙটি ফেলে দেন”।[1]
ইমাম আবু দাউদ আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি
বলেন: একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবিদের নিয়ে সালাত
আদায় করতে ছিলেন, হটাৎ তিনি জুতো খুলে বাম পাশে রেখে দেন। যখন
লোকেরা তাকে দেখল, তারাও
তাদের জুতো নিক্ষেপ করল। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করে বলেন: তোমরা কেন তোমাদের জুতো নিক্ষেপ করেছ, তারা
বলল: আমরা আপনাকে দেখেছি আপনি জুতো নিক্ষেপ
করেছেন, তাই আমরাও আমাদের
জুতো নিক্ষেপ করেছি। তিনি বললেন: জিবরিল
আমার নিকট এসে বলল যে, জুতোতে
ময়লা রয়েছে”।[2]
ইজমায়ে উম্মত:
আমরা যদি আদর্শ পূর্বসূরি ও তাদের
পরবর্তী ইমামদের পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে আমরা এমন কাউকে পাব না, যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ইমান,
সামান্য কল্যাণ ও ইখলাস রয়েছে, তিনি হাদিসকে অস্বীকার করেছেন, বা তাকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেননি, তার দাবি অনুযায়ী আমল
করেননি; বরং এর বিপরীতে আমরা দেখি যে, তারা সকলে হাদিস আঁকড়ে ধরেছেন, তার আদর্শে আদর্শবান ছিলেন, অতি আগ্রহ ও উৎসাহ নিয়ে তার উপর আমল করেছেন, এবং তার বিরোধিতা থেকে সতর্ক করেছেন। কারণ একটাই যে, হাদিস ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস, হাদিসের উপর নির্ভর করে কুরআনুল কারীম বুঝা ও তার অধিকাংশ আহকাম। অতএব সন্দেহ নেই হাদিসের প্রামাণিকতার উপর উম্মতের ইজমা ও ঐক্যমত্য
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এবং এ বিষয়ে তাদের অন্তরে
কোন দ্বিমত নেই। ইমাম শাফে‘ঈ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: “এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, যার নিকট হাদিস প্রমাণিত হল, তার কোন সুযোগ নেই অন্য কারো কথায় তা ত্যাগ করা”।[3]
তিনি আরো বলেন: “আমি এমন কাউকে শুনিনি, যাকে মানুষ আহলে ইলম বলে অথবা যিনি নিজেকে আহলে ইলম বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফয়সালাকে মেনে নেয়া, একমাত্র তার অনুসরণ করা, কোন অবস্থাতে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদিস পরিহার না করা, কুরআন ও হাদিস ব্যতীত যাবতীয় বিষয় কুরআন ও হাদিসের অনুগত; আমাদের
উপর, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস মেনে নেয়া, তার সংবাদ গ্রহণ করা ওয়াজিব ইত্যাদি বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন”।[4]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ
فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ
وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ ﴾ [النساء : ٥٩]
“অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা
মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যর্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও
শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”।[5]
এ আয়াত প্রসঙ্গে ইমাম ইব্ন হাযম রাহিমাহুল্লাহ
বলেন: “সকল উম্মত এ ব্যাপারে একমত যে, এ সম্বোধন আমাদের ও সকল মখলুকের প্রতি, যাদেরকে
কিয়ামত পর্যন্ত সৃষ্টি করা হবে ও যেসব রূহ শরীরে সঞ্চার করা হবে,
হোক সে জিন বা মানুষ।
যেমন এ সম্বোধন
ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে সবার প্রতি, তাদের পরবর্তীতে যারা আসবে তাদের উপর সমানভাবে প্রযোজ্য হবে”।[6]
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: “জানা আবশ্যক যে, এমন কোন ইমাম নেই, উম্মতের নিকট যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তিনি স্বেচ্ছায় ছোট কিংবা বড় কোন বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরোধিতা করেছেন। কারণ তারা সবাই একমত ছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা ওয়াজিব, প্রত্যেকের কথা গ্রহণ করা ও ত্যাগ করার সুযোগ রয়েছে, একমাত্র নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ব্যতীত”।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন