তাওহীদ পরিচিতি-1
অনুবাদ: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
অনুবাদকের কথা
সমস্ত
প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর, যিনি ছাড়া আর কোন রব নেই, আর কোন প্রকৃত মা‘বুদও নেই।
দরূদ ও সাল্লাম বর্ষিত হোক সৃষ্টিকুল শিরোমণি তাওহীদের বাণী প্রচারক শেষ নবী
মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবা এবং তাঁর সঠিক অনুসারী সেই সব বীর সেনানীদের
উপর যাদের মাধ্যমে তাওহীদের শাশ্বত পয়গাম সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
‘‘আমি জ্বীন ও ইনসান জাতিকে কেবল মাত্র আমার ইবাদাতের
জন্যই সৃষ্টি করেছি’’ - মহান আল্লাহর এ ঘোষণার মধ্যেই নিহিত রয়েছে তাওহীদের মূলকথা। তাইতো সকল নবী ও রাসূলগণ
নিজ-নিজ উম্মাতদেরকে শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদাতের দিকেই প্রথম আহ্বান
জানিয়েছিলেন। সুতরাং তাওহীদকে উত্তমরূপে বুঝে সে আলোকে জীবনকে পরিপূর্ণরূপে ঢেলে
সাজানো প্রত্যেক মুসলিমের আশু কর্তব্য। তাওহীদ সম্পর্কিত পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে
যে কেউ সহজেই শির্ক ও বিদ‘আতে লিপ্ত হয়ে পড়তে পারে এবং সে সাথে তার আখেরাতের জীবন
হয়ে পড়তে পারে ভয়ানক ভাবে বিপন্ন।
বাংলা ভাষাভাষী প্রত্যেক মুসলিম যাতে তাওহীদ সম্পর্কে
সহজে সঠিক ধারণা অর্জন করতে পারে সে উদ্দেশ্যে ইমাম মুহাম্মদ ইবন সউদ ইসলামী
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত প্রফেসর এবং সৌদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদের অন্যতম সদস্য
ড. সালেহ্ ইবন ফাওযান আল-ফাওযানের লেখা ‘কিতাবুত তাওহীদ’ বইটির অনুবাদের তাড়া
অনুভব করি। মূল আরবী বইটির নাম ছিল ‘আকীদাতুত তাওহীদ’ বা তাওহীদী আকীদা। তাওহীদকে যাতে মুসলিমগণ নিজেদের জীবনে
প্রতিষ্ঠিত করে সে ভিত্তিক জীবন গড়তে পারেন, সে জন্য যে সব বিষয়ে জ্ঞানার্জন
অত্যাবশ্যকীয় - এমন সব বিষয়ের আলোচনাই এ বইতে পেশ করা হয়েছে। এ বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ
ছয়টি অধ্যায় রয়েছে। ‘ইসলামী আকীদার পরিচয়’ এ বইয়েরই প্রথম দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ প্রথম
দু’টি অধ্যায়ের বিষয়বস্তুর স্বতন্ত্র গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে তা ইসলাম হাউসের
ওয়েবসাইটে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কারণ, বাকী অংশ পূর্ব থেকেই ইসলাম হাউসের ওয়েবসাইটে
দেয়া আছে।
বিষয়বস্তুকে আকর্ষণীয়ভাবে সরল ও সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপন
এ বইয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অনুবাদে এ বৈশিষ্ট্য যথাসম্ভব ফুটিয়ে তোলার ব্যাপারে
আন্তরিক প্রয়াস ছিলো। তা সত্ত্বেও যে কোন প্রকার ভুল-ত্রুটি থেকে যাওয়া অসম্ভব নয়।
যে কোন ভুল-ত্রুটির প্রতি সহৃদয় পাঠকবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ কিংবা তাদের দেয়া যে
কোন পরামর্শ সাদরে গৃহীত হবে। এ অনুবাদের পরিমার্জনায় সাহায্য করে এবং প্রয়োজনীয়
পরামর্শ দিয়ে যারা সক্রিয় অবদান রেখেছেন তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আল্লাহ্
আমাদের, তাদের ও আরো যারা একাজে সহায়তা করেছেন - সবার সৎকর্মগুলো কবুল করুন ! আমীন
!!
গ্রন্থকারের ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম
বর্ষিত হোক সত্যবাদী বিশ্বস্ত নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর
এবং তাঁর সকল পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের উপর।
এটি তাওহীদ বিষয়ক একটি গ্রন্থ। এতে
সহজ ও সাবলীল পদ্ধতি প্রয়োগের পাশাপাশি বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্তভাবে পেশ করার প্রতি
লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বইটির বিষয়বস্তু বহু উৎস গ্রন্থ তথা আমাদের বড় বড় ইমামদের
গ্রন্থাবলী থেকে বিশেষ করে শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ্, আল্লামাহ্ ইবনুল কাইয়্যেম,
শায়খুল ইসলাম মুহাম্মদ ইবন আবদুল ওয়াহ্হাব ও তাঁর ছাত্রবৃন্দের ন্যায় মুবারক
দাওয়াতী কাজের বীরসেনানী বড় বড় ইমামদের গ্রন্থ থেকে চয়ন করা হয়েছে। সন্দেহ নেই
ইসলামী আকীদার বিষয়টি সেই মৌলিক জ্ঞানেরই অন্তর্ভুক্ত, যা শিক্ষা করা, অপরকে
শিক্ষা দেয়া ও সে মোতাবেক আমল করা যথার্থ গুরুত্বের দাবীদার, যাতে করে বান্দার আমল
সহীহ্ হয়, আল্লাহর নিকট তা গ্রহণযোগ্য হয় এবং আমলকারীর জন্য তা উপকারী হয়। বিশেষ
করে আমরা এমন এক সময়ে অবস্থান করছি, যখন নাস্তিকবাদ, সূফীবাদ, বৈরাগ্যবাদ,
পৌত্তলিক কবর পূজা এবং মহানবীর আদর্শের পরিপন্থী বিদ‘আতের ন্যায় ভ্রান্ত
মতাদর্শসমূহের সয়লাব বয়ে যাচ্ছে। এ রকম গোলযোগপূর্ণ পরিবেশে মুসলিম যদি কুরআন,
সুন্নাহ এবং সালাফে-সালেহীনের তরীকা অনুযায়ী বিশুদ্ধ আকীদার অস্ত্রে সুসজ্জিত হতে
না পারে, তাহলে এ সব বিকৃত মতাদর্শসমূহ তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠবে এবং
তাকে গ্রাস করবে। আর তাই মুসলিমদের সন্তানদেরকে যাতে আকীদার আসল উৎসসমূহ থেকে
বিশুদ্ধ আকীদা শিক্ষা দেয়া যায়, সে ব্যাপারে পূর্ণ গুরুত্ব প্রদান ও ব্যবস্থা নেয়া
জরুরী।
ওয়া সাল্লাল্লাহু ওয়া
সাল্লামা ‘আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ, ওয়ালা আলিহি ওয়া সাহবিহি...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন