তাওহীদ পরিচিতি-2
অনুবাদ: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ইসলামী
আকীদার পরিচয়
এতে রয়েছে নিম্নবর্ণিত
পরিচ্ছেদসমূহঃ
প্রথম
পরিচ্ছেদ
আকীদার অর্থ এবং দ্বীনের
মৌলিক ভিত্তি হিসেবে এর গুরুত্বের বর্ণনা
আকীদার আভিধানিক অর্থ:
আকীদা শব্দটি আরবী العَقدُ العَقدُ(আল-‘আকদু (থেকে গৃহিত। এর অর্থ কোন কিছু বেঁধে রাখা। বলা হয়عَقدْتُ عَليْهِ القلبَ وَالضَّمِيْرَ অর্থাৎ আমি এর উপর হৃদয় ও মনকে বেঁধেছি। আকীদা
হল ঐ বিষয়, মানুষ যা মেনে চলে। বলা হয়, ‘তার আছে
সুন্দর আকীদা’ অর্থাৎ এমন আকীদা যা সন্দেহমুক্ত। আকীদা অন্তরের কাজ। অন্যভাবে বলা
যায়, আকীদা হল কোন বিষয়ের প্রতি অন্তরের ঈমান ও প্রত্যয় এবং অন্তর দিয়ে সে বিষয়কে
সত্য প্রতিপন্ন করা।
আকীদার শর‘ঈ অর্থ:
শরীয়তের
পরিভাষায় আকীদা হল: আল্লাহর প্রতি, তাঁর
মালাইকা (ফেরেশতা), তাঁর গ্রন্থসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান
পোষণ এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান রাখা। আর এগুলোকে বলা হয় ঈমানের রুকন।
শরীয়ত দু’ভাগে বিভক্ত : আকীদা ও আমল তথা অন্তরের
বিশ্বাসগত বিষয় ও দৈহিক, আর্থিক কর্মকাণ্ডগত বিষয় :
আকীদাগত বিষয়সমূহ হল এমন যা
কাজে রূপায়িত করার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় অর্থাৎ যার কোন বাহ্যিক কার্যরূপ নেই। যেমন
এই আকীদা পোষণ করা যে, আল্লাহ্ রব এবং তাঁর ইবাদাত করা ওয়াজিব। একইভাবে ঈমানের
উল্লেখিত বাকী রুকনগুলোর প্রতিও
বিশ্বাস রাখা। এগুলোকে বলা হয় মৌলিক বিষয়।
আর আমলী বিষয়সমূহ হল এমন যা কার্যে পরিণত করা যায়, যেমন সালাত আদায়,
যাকাত প্রদান, সাওম পালন ও যাবতীয় সকল আমলী বিধান। এগুলোকে বলা হয় আনুষঙ্গিক বিষয়।
কেননা এগুলোর শুদ্ধাশুদ্ধি উক্ত মৌলিক বিষয়সমূহের শুদ্ধাশুদ্ধির উপর নির্ভরশীল।[1]
অতএব বিশুদ্ধ আকীদা হল এমন মৌলিক ভিত্তি যার উপর দ্বীন
স্থাপিত এবং যা থাকলে আমল শুদ্ধ ও সহীহ হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا
صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠ ﴾ [الكهف: ١١٠]
‘‘অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে সে
যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে।’’[2]
আল্লাহ তা‘আলা
আরো বলেন :
﴿ وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ
أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ ﴾ [الزمر: ٦٤]
‘‘তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী প্রেরণ
করা হয়েছে যে, যদি (আল্লাহর সাথে) শরীক কর তাহলে তোমার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং
তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’’[3]
আল্লাহ তা‘আলা
আরো বলেন:
﴿فَٱعۡبُدِ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ ٢ أَلَا لِلَّهِ
ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصُۚ ﴾ [الزمر: ٣]
‘‘অতএব তুমি ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদাত কর।
জেনে রাখ, আল্লাহর জন্যই নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদাত ও আনুগত্য।’’[4]
সুতরাং এই মহান আয়াতসমূহ ও অনুরূপ অর্থে আরো বহুসংখ্যক
যে আয়াতসমূহ এসেছে তা এ প্রমাণই বহন করছে যে, আমল শির্ক থেকে মুক্ত না হওয়া ব্যতীত
কবুল হয় না। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই রাসূলগণ (আল্লাহ্ তাঁদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ
করুন) সর্বপ্রথম আকীদা সংশোধনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাই তাঁরা সর্বপ্রথম
স্ব-স্ব জাতির লোকদেরকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি ও অন্য সব কিছুর ইবাদাত
ত্যাগ করার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ
ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ ﴾ [النحل:
٣٦]
‘‘আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির মধ্যে একজন রাসূলকে প্রেরণ
করেছিলাম এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তাগুতকে পরিহার
করবে।’’[5]
প্রত্যেক রাসূলই তার জাতিকে প্রথমে এ কথা বলে সম্বোধন
করেছিলেন যে,
﴿ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم
مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥٓ ٥٩ ﴾ [الاعراف:
٥٨]
‘‘তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের
প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই।’’[6] এ কথাটি বলেছিলেন নূহ, হুদ, সালেহ, শু‘আইব এবং সকল
নবীগণ (আল্লাহ তাঁদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) তাঁদের নিজ নিজ জাতির
উদ্দেশ্যে।
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াতের পর তের বছর ধরে মানুষকে তাওহীদের প্রতি ও আকীদার
সংশোধনের প্রতি আহ্বান জানাতে থাকলেন। কেননা আকীদাই হচ্ছে ঐ মূলভিত্তি যার উপর
দ্বীনের ভিত্তি স্থাপিত। আর প্রত্যেক যুগেই দা‘ঈ-ইলাল্লাহ ও সংস্কারকগণ নবী ও
রাসূলগণের সে আদর্শের অনুসারী ছিলেন। তাঁরা তাওহীদের প্রতি ও আকীদা সংশোধনের প্রতি
আহ্বান করার মাধ্যমেই তাঁদের কাজ শুরু করেছিলেন। এরপর তাঁরা দ্বীনের অন্যান্য
নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের দিকে মনোনিবেশ করেন।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
আকীদার উৎসগ্রন্থ এবং
আকীদা বিষয়ক জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী আলেমগণের নীতি
আকীদার জ্ঞান ওহী নির্ভর। সুতরাং শরীয়ত প্রণেতার
পক্ষ থেকে কোন দলীল বা প্রমাণ ছাড়া কোন আকীদা সাব্যস্ত করা যাবে না। আকীদার
ক্ষেত্রে নিজস্ব রায়, অভিমত ও ইজতিহাদের কোন অবকাশ নেই। সুতরাং আকীদার উৎস
শুধুমাত্র আল-কুরআন ও সুন্নায় যে তথ্য এসেছে তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কেননা
আল্লাহ সম্পর্কে এবং আল্লাহর জন্য কি হওয়া সঙ্গত এবং কোন্ কোন্ বস্তু থেকে
তিনি মুক্ত ও পবিত্র তা তাঁর চেয়ে বেশী আর
কেউই জানে না। আর আল্লাহর পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেয়ে
আল্লাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞান আর কেউই রাখে না। এজন্যই আকীদা অর্জনের ক্ষেত্রে
সালাফে সালেহ তথা পূর্ববর্তী বিজ্ঞ সৎ আলেমদের ও তাঁদের অনুসারীদের নীতি ছিল আল-কিতাব
তথা আল-কুরআন ও আস-সুন্নাহ্’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা।
অতএব আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহ্ যে প্রমাণ বহন করছে তার প্রতি তাঁরা
ঈমান এনেছেন, সেভাবেই আকীদাকে সাজিয়ে নিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী আমল করেছেন। আল্লাহর
কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ্ দ্বারা যা প্রমাণিত হয় নি আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে তা তাঁরা অস্বীকার করেছেন এবং প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ
কারণেই আকীদার ক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যে কোন মতভেদ হয়নি। বরং তাঁদের সকলের আকীদা ছিল
এক ও অভিন্ন এবং তাঁদের জামায়াত বা দলও ছিল একটি। এর কারণ হল, যারা আল্লাহর কিতাব
ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ্ আঁকড়ে ধরে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের এক কালেমায় ঐক্যবদ্ধ
থাকার এবং সঠিক আকীদা ও এক নীতির অনুসারী হওয়ার গ্যারান্টি দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ
﴾ [ال عمران: ١٠٣]
‘‘আর তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে
আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’’[7]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿ فَإِمَّا يَأۡتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدٗى فَمَنِ ٱتَّبَعَ هُدَايَ
فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشۡقَىٰ ١٢٣ ﴾ [طه:
١٢٣]
‘‘তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে হিদায়াত এসে গেলে যে ব্যক্তি আমার
হিদায়াত অনুসরণ করবে সে ভ্রষ্ট হবে না এবং হতভাগ্যও হবে না।’’[8]
এজন্যই
এদেরকে অভিহিত করা হয়েছে ‘‘আল-ফিরকাহ আন-নাজিয়াহ’’ অর্থাৎ বিজয়ী দল অথবা
মুক্তিপ্রাপ্ত দল নামে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের পক্ষে
নাজাতের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যখন উম্মত ৭৩টি দলে বিভক্ত হবে বলে তিনি খবর দিয়েছেন,
যে দলগুলোর একটি ছাড়া বাকী সবগুলো দল জাহান্নামী হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। আর যখন এ
একটি দল সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি ও আমার
সাহাবীগণ আজ যে আদর্শের উপর রয়েছি যারা সে আদর্শের উপর থাকবে তারাই সে
মুক্তিপ্রাপ্ত বা নাজাতপ্রাপ্ত দল।’’[9]
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সংবাদ দিয়েছিলেন বর্তমানে তার সত্যতা বাস্তবে প্রতিফলিত
হয়েছে। যখন কিছু লোক আল-কুরআন ও সুন্নাহ্ ছাড়া অন্য বিষয় যেমন ইলমুল কালাম ও
গ্রীকদর্শন থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত মানতেক তথা তর্কশাস্ত্রের নীতিমালার
উপর তাদের আকীদার ভিত্তি স্থাপন করেছে, তখন তাদের আকীদায় বক্রতা ও অনৈক্য দেখা
দিয়েছে, যার ফলে তাদের কথা ও বক্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে বিভক্তি, দেখা দিয়েছে মুসলিম
জামায়াতের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা এবং চূর্ণ- বিচূর্ণ হয়ে গেছে ইসলামী সমাজের ভিত্তি
।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
সঠিক আকীদা
থেকে বিচ্যুতির কারণ এবং তা থেকে বাঁচার পন্থাসমূহ
বিশুদ্ধ আকীদা থেকে বিচ্যুত হওয়া ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন
হওয়ার কারণ। কেননা বিশুদ্ধ আকীদাই কল্যাণকর আমল করার শক্তিশালী প্রেরণাদায়ক
উপাদান। বিশুদ্ধ আকীদা ছাড়া যে কোন ব্যক্তি ধারণা-কল্পনা ও সন্দেহের বশবর্তী হয়ে
যেতে পারে, যা অতি সহজেই তার মন মস্তিষ্কে দানা বেঁধে সুখী জীবন পরিচালনার
ক্ষেত্রে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ থেকে তাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ফলে তার জীবন হয়ে
পড়বে সঙ্গীন ও সংকীর্ণ। এরপর সে আত্মহত্যার মাধ্যমে হলেও তার জীবনকে শেষ করে এ
সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করবে, যেমন এ ব্যাপারটি বহু লোকের জীবনে বাস্তব
হয়ে উঠেছে যারা সঠিক আকীদার হিদায়াত লাভ করতে পারে নি। সঠিক আকীদা যে সমাজকে
পরিচালিত করে না সে সমাজ একটি পাশবিক সমাজ, যা সুখী জীবনের সকল মূল্যবোধ হারিয়ে
ফেলে, যদিও সে সমাজ বৈষয়িক জীবনের বহু
উপাদানের মালিক হয়ে থাকে, যে উপাদানগুলো অধিকাংশ সময় সমাজকে ধ্বংসের দিকেই নিয়ে যায়।
আমরা অমুসলিম সমাজের মধ্যে এ ধরনের বহু দৃশ্য অবলোকন করি। কেননা বৈষয়িক এ
উপাদানসমূহ সঠিক উপদেশ ও দিকনির্দেশনার মূখাপেক্ষী, যাতে এগুলোর কার্যকারিতা ও
কল্যাণ থেকে উপকৃত হওয়া যায়। আর সঠিক ও বিশুদ্ধ আকীদা ছাড়া অন্য কোন কিছু সত্যিকার
দিকনির্দেশনা দিতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ
صَٰلِحًاۖ ﴾ [المؤمنون : ٥١]
‘‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও ভাল বস্তু থেকে খাও এবং সৎ
কাজ কর।’’[10]
আল্লাহ তা‘আলা
আরো বলেন:
﴿ ۞وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَا دَاوُۥدَ مِنَّا فَضۡلٗاۖ يَٰجِبَالُ أَوِّبِي
مَعَهُۥ وَٱلطَّيۡرَۖ وَأَلَنَّا لَهُ ٱلۡحَدِيدَ ١٠ أَنِ ٱعۡمَلۡ سَٰبِغَٰتٖ وَقَدِّرۡ
فِي ٱلسَّرۡدِۖ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ إِنِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ١١ وَلِسُلَيۡمَٰنَ
ٱلرِّيحَ غُدُوُّهَا شَهۡرٞ وَرَوَاحُهَا شَهۡرٞۖ وَأَسَلۡنَا لَهُۥ عَيۡنَ ٱلۡقِطۡرِۖ
وَمِنَ ٱلۡجِنِّ مَن يَعۡمَلُ بَيۡنَ يَدَيۡهِ بِإِذۡنِ رَبِّهِۦۖ وَمَن يَزِغۡ مِنۡهُمۡ
عَنۡ أَمۡرِنَا نُذِقۡهُ مِنۡ عَذَابِ ٱلسَّعِيرِ ١٢ يَعۡمَلُونَ لَهُۥ مَا يَشَآءُ
مِن مَّحَٰرِيبَ وَتَمَٰثِيلَ وَجِفَانٖ كَٱلۡجَوَابِ وَقُدُورٖ رَّاسِيَٰتٍۚ ٱعۡمَلُوٓاْ
ءَالَ دَاوُۥدَ شُكۡرٗاۚ وَقَلِيلٞ مِّنۡ عِبَادِيَ ٱلشَّكُورُ ١٣ ﴾ [سبأ: ١٠، ١٣]
‘‘আর আমি নিশ্চয়ই দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আদেশ
করেছিলাম) হে পর্বতমালা! তোমরা দাঊদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করো এবং
বিহঙ্গকূলকেও। তার জন্য নমনীয় করেছিলাম লৌহ। (নির্দেশ দিয়েছিলাম) তুমি পূর্ণ মাপের
বর্ম প্রস্তুত করো এবং বুননে পরিমাণ রক্ষা কর। আর সৎকাজ কর। তোমরা যা কিছু করো আমি
তার সম্যকদ্রষ্টা। আর আমি সুলাইমানের অধীন করেছিলাম বায়ূকে যা প্রভাতে এক মাসের পথ
অতিক্রম করত এবং সন্ধ্যায় এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আর আমি তার জন্য গলিত তাম্রের
এক প্রস্রবণ প্রবাহিত করেছিলাম। তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে জ্বীনদের কতক তার
সম্মুখে কাজ করত। তাদের মধ্যে যে আমার নির্দেশ থেকে বিচ্যুত হয় তাকে আমি জ্বলন্ত
অগ্নির শাস্তি আস্বাদন করাবো। তারা সুলাইমানের ইচ্ছানুযায়ী প্রাসাদ, ভাস্কর্য,
হাউজ সদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত ডেক নির্মাণ করত। (আমি বলেছিলাম)
হে দাঊদ পরিবার! কৃতজ্ঞতার সাথে তোমরা কাজ করতে থাকো, আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই
কৃতজ্ঞ।’’[11]
অতএব
বৈষয়িক শক্তি থেকে আকীদার শক্তি বিচ্ছিন্ন না হওয়া অত্যন্ত জরুরী। কেননা বাতিল
আকীদার দিকে ধাবিত হয়ে সঠিক আকীদা থেকে বৈষয়িক শক্তিকে বিচ্ছিন্ন করলে বৈষয়িক
শক্তি ধ্বংস ও অধঃপতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনটিই আজ কাফির রাষ্ট্রসমূহে পরিদৃষ্ট
হচ্ছে, যারা বৈষয়িক শক্তির অধিকারী বটে, তবে কোন সহীহ আকীদা তারা পোষণ করে না।
সহীহ আকীদা থেকে বিচ্যুত হওয়ার অনেকগুলো কারণ
রয়েছে যেগুলো জানা অপরিহার্য। তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো নিম্নরূপ:
১. সহীহ আকীদা সম্পর্কে
অজ্ঞতা। আর এ অজ্ঞতার কারণ হচ্ছে সহীহ আকীদার পঠন থেকে বিমুখ থাকা অথবা সহীহ আকীদা
সম্পর্কে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব না থাকা বা কম থাকা। যার ফলে এমন এক প্রজন্ম সৃষ্টি হয়
যারা সে আকীদার কিছুই জানে না এবং এও জানে না সে আকীদার বিরোধী বস্তুগুলো কি, সে
আকীদার বিপরীত চিন্তাভাবনাগুলো কি। যার ফলে সে প্রজন্ম হক্ব ও সত্যকে বাতিল বলে
বিশ্বাস করে এবং বাতিলকে হক্ব বলে বিশ্বাস করে। যেমন উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু
আনহু বলেছিলেন, ‘ইসলামের রজ্জুতো এভাবে একটি একটি করে নষ্ট হয়ে যাবে যখন ইসলামের
মধ্যে এমন ব্যক্তি তৈরী হবে যারা জাহিলিয়্যাতের পরিচয় জানবে না।’[12]
২. বাপ-দাদা তথা
পূর্বপুরুষগণ যে মতাদর্শের উপর ছিলেন সে ব্যাপারে গোড়ামী প্রদর্শন এবং বাতিল হওয়া
সত্ত্বেও কঠোরভাবে তা আঁকড়ে থাকা আর হক্ব ও সত্য হওয়া সত্ত্বেও এর বিপরীত যা রয়েছে
তা পরিত্যাগ করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা
বলেন:
﴿ وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ ٱتَّبِعُواْ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ قَالُواْ
بَلۡ نَتَّبِعُ مَآ أَلۡفَيۡنَا عَلَيۡهِ ءَابَآءَنَآۚ أَوَلَوۡ كَانَ ءَابَآؤُهُمۡ
لَا يَعۡقِلُونَ شَيۡٔٗا وَلَايَهۡتَدُونَ ١٧٠ ﴾ [البقرة:
١٧٠]
‘‘যখন তাদেরকে বলা হয় আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা তার
অনুসরণ করো। তারা বলে, আমরা তো অনুসরণ করবো যার উপর আমাদের পূর্ববর্তী পুরুষদেরকে
আমরা পেয়েছিলাম। (তারা কি এমনই করবে?) যদিও তাদের পূর্ববর্তী পুরুষগণ কিছুই
উপলব্ধি করতো না এবং সুপথ পেত না।’’[13]
৩. দলীল প্রমাণ জানা ছাড়াই আকীদার ক্ষেত্রে মানুষের
বক্তব্য অন্ধভাবে মেনে নেওয়া। যেমনটি বাস্তবে লক্ষ্য করা যায় জাহমিয়া, মু‘তাযিলা,
আশ্আরীয়া, সূফিয়া প্রমূখ সত্যবিরোধী দলসমূহের ক্ষেত্রে। কেননা তারা তাদের
পূর্ববর্তী ভ্রষ্ট ইমাম ও নেতৃবৃন্দের অন্ধ অনুকরণ করেছে। ফলে তারা বিশুদ্ধ আকীদা
থেকে বিভ্রান্ত এবং বিচ্যুত হয়ে গেছে।
৪. অলী-আওলিয়া ও সৎলোকদের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা,
তাদেরকে তাদের মর্যাদার উপরে স্থান দেওয়া এবং তাদের ব্যাপারে এ আকীদা পোষণ করা যে,
তারা কল্যাণ সাধন অথবা অকল্যাণ রোধ করতে পারেন। অথচ কেবলমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউই তা করতে সক্ষম নন। আর তাদেরকে আল্লাহ
ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে হাজত পূরণ ও দো‘আ কবুলের
ক্ষেত্রে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা যার ফলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর পরিবর্তে তাদেরই
ইবাদাত করা হয়ে যায়। অনুরূপভাবে তাদের মাযারসমূহে পশু যবেহ করা, মানত করা, দো‘আ করা, আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনার মাধ্যমে নৈকট্য ও সাওয়াব অর্জন করা
যায় বলে বিশ্বাস করা। যেমনটি করেছিল নূহ আলাইহিস সাল্লামের সম্প্রদায়ের লোকেরা
তাদের পূর্ববর্তী সৎ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যখন তারা বলেছিল,
﴿وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكُمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا
وَلَا سُوَاعٗا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا ٢٣ ﴾ [نوح:
٢٣]
‘‘তোমরা
তোমাদের ইলাহদেরকে পরিত্যাগ করো না, তোমরা পরিত্যাগ করো না ওয়াদ, সূওয়া‘আ, ইয়াগুস,
ইয়া‘উক ও নাসরকে।’’[14]
এরকমই আজ অনেক দেশে দেখা যায় কবরপূজারীদের ক্ষেত্রে।
৫. আল্লাহর পার্থিব নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা
থেকে গাফিল থাকা, আল্লাহর নাযিলকৃত আল-কুরআনের আয়াত নিয়ে গবেষণা থেকে সরে যাওয়া ও
বস্তুবাদী সভ্যতার চোখধাঁধাঁনো নানা অর্জন নিয়ে মত্ত থাকা; যার ফলে তাদের ধারণা হয়
যে, এসব কিছু একমাত্র মানুষেরই সামর্থের ফসল। ফলে তারা মানুষকে অতি মাত্রায় সম্মান
দিতে থাকে এবং এ সকল অর্জন শুধু মানুষের পরিশ্রম ও আবিষ্কারের ফসল বলে আখ্যায়িত
করতে থাকে। ইতঃপূর্বে আল-কুরআনের ভাষায় কারূন যেমন বলেছিল,
﴿ قَالَ إِنَّمَآ أُوتِيتُهُۥ عَلَىٰ عِلۡمٍ عِندِيٓۚ ﴾ [القصص: ٧٨]
অথচ ঐ সত্ত্বার বিশালত্ব ও মহত্ত্বের ব্যাপারে তারা কোন
চিন্তা ও গবেষণা করে নি যিনি এ বিশ্বজগতের সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন, আর সে সবের
মধ্যে রেখে দিয়েছেন চোখধাঁধানো সব বৈশিষ্ট্য, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, আর
সৃষ্টির সে সব বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করা ও তা থেকে উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে মানুষকে
সামর্থ দান করেছেন। আল্লাহ বলেন,
﴿ وَٱللَّهُ خَلَقَكُمۡ وَمَا تَعۡمَلُونَ ٩٦ ﴾ [الصافات : ٩٦]
﴿ أَوَلَمۡ يَنظُرُواْ فِي مَلَكُوتِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ
وَمَا خَلَقَ ٱللَّهُ مِن شَيۡءٖ ﴾ [الاعراف:
١٨٤]
‘‘তারা কি নযর দেয়নি আসমান ও যমীনের সৃষ্টির প্রতি এবং
সে সকল কিছুর প্রতি যা আল্লাহ সৃষ্টি
করেছেন?’’[19]
﴿ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَأَنزَلَ
مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجَ بِهِۦ مِنَ ٱلثَّمَرَٰتِ رِزۡقٗا لَّكُمۡۖ وَسَخَّرَ
لَكُمُ ٱلۡفُلۡكَ لِتَجۡرِيَ فِي ٱلۡبَحۡرِ بِأَمۡرِهِۦۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلۡأَنۡهَٰرَ
٣٢ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ دَآئِبَيۡنِۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلَّيۡلَ
وَٱلنَّهَارَ ٣٣ وَءَاتَىٰكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلۡتُمُوهُۚ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَتَ
ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ ﴾ [ابراهيم: ٣٢، ٣٤]
‘‘আল্লাহ যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। আসমান থেকে তিনি
পানি বর্ষণ করে তদ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন। তিনি নৌযানকে
তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তাঁর নির্দেশে এটি সমূদ্রে বিচরণ করে এবং যিনি
তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন নদীসমূহকে। তিনি তোমাদের কল্যাণের জন্য নিয়োজিত
করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুবর্তী এবং তোমাদের কল্যাণে
নিয়োজিত করেছেন রাত্রি ও দিবসকে। আর তোমরা তাঁর নিকট যা কিছু চেয়েছ তার প্রতিটি
হতে তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না।’’[20]
৬.অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারগুলো সঠিক দিকনির্দেশনা থেকে
বঞ্চিত থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ
فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ»
‘‘প্রত্যেক নবজাতক ফিৎরাত তথা ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ
করে। অত:পর তার বাবা-মা তাকে ইয়াহুদি অথবা নাসারা কিংবা মাজুসি তথা অগ্নিউপাসকে
পরিণত করে।’’[21]
সুতরাং শিশুর ঝোঁক,
প্রবণতা ও দৃষ্টিভঙ্গি মূল্যায়নে বাবা-মায়ের একটি বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
৭. ইসলামী বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই শিক্ষা ও প্রচার
মাধ্যমগুলো তাদের দায়িত্ব আদায় থেকে দূরে থেকেছে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে
কারিক্যুলাম ও শিক্ষাক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ব্যাপারটিকে বেশী গুরুত্ব
প্রদান করা হয় না। অথবা তার প্রতি আদৌ কোন গুরুত্বই থাকে না। আর অডিও-ভিজুয়াল ও
পঠন উপযোগী প্রচারমাধ্যমসমূহসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রই ধ্বংস ও অধঃপতনের উপকরণে পরিণত
হয়েছে। অথবা এগুলো শুধুমাত্র বৈষয়িক ও আনন্দ-উল্লাসের ব্যাপারেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে
এবং সে সব বিষয়ে কোনই গুরুত্ব প্রদান করে না যা নৈতিকতা ও চরিত্রকে মূল্য দিয়ে
থাকে এবং সহীহ আকীদার বীজ বপন করে; ফলে এদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এমন এক প্রজন্ম
যারা নাস্তিকবাদের সৈন্যদের সামনে জ্ঞানহীন, সে লোকদের প্রতিরোধ করার মত সামর্থ
যাদের কাছে আর অবশিষ্ট নেই।
এ অধঃপতন ও ভ্রষ্টতা
থেকে বাঁচার উপায়সমূহকে নিম্নে এভাবে সংক্ষেপে উল্লেখ করা যেতে পারে।
(ক). মহান আল্লাহর গ্রন্থ আল-কুরআন ও তাঁর রাসূলের
সুন্নাহর দিকে ফিরে আসা; যাতে এ উভয় উৎস থেকে সহীহ আকীদা অর্জন করা যায় যেমনিভাবে
সালাফে-সালেহ তথা পূর্ববর্তী সত্যনিষ্ঠ আলেমগণ এ উৎসদ্বয় হতে তাদের আকীদা আহরণ করতেন।
আর এ উম্মতের সর্বশেষ লোকদেরকে সংশোধন শুধুমাত্র সেই বস্তুই করতে পারে যা উম্মতের
প্রথম অংশকে সংশোধন করেছিল। এর পাশাপাশি জানা থাকতে হবে বিভ্রান্ত দলসমূহের আকীদা
এবং তাদের সংশয়সমূহ, যেন তাদের সে সংশয়গুলো অপনোদন করা যায় এবং এ সকল দল সম্পর্কে
মানুষকে সতর্ক করা যায়। কেননা যারা অনিষ্ট সম্পর্কে জানে না তারা সে অনিষ্টে পতিত
হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
(খ). শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে সহীহ আকীদা তথা
সালাফে-সালেহীনের বিশুদ্ধ আকীদা পড়ানোর প্রতি প্রয়োজনীয় গুরুত্ব আরোপ করা,
শিক্ষাক্রমের মধ্যে আকীদা বিষয়ে যথেষ্ঠ পরিমাণে পাঠদানের ঘন্টা বাড়ানো এবং এ বিষয়ে
পরীক্ষার খাতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে চুড়ান্ত গুরুত্ব আরোপ করা।
(গ). সালাফে-সালেহীনের বিশুদ্ধ গ্রন্থসমূহ সিলেবাসভূক্ত
করা এবং সূফিয়া, বিদ‘আতী, জাহমিয়া, মু‘তাযিলা, আশ‘আরিয়া ও মাতুরিদিয়াহসহ আরো যে সব
বিভ্রান্ত দলসমূহ রয়েছে তাদের গ্রন্থসমূহ সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া। অবশ্য এ দলসমূহ
সম্পর্কে শুধু এজন্য জ্ঞানার্জন করা যেতে পারে যাতে তাদের মধ্যে যে বাতিল আকীদা
রয়েছে তার জবাব দেয়া যায় এবং তাদের সম্পর্কে সতর্ক করা যায়।
(ঘ). এমন এক দল সংস্কারক দা‘ঈ ইলাল্লাহ তৈরী হওয়া যারা
মানুষের জন্য সালাফ তথা পূর্ববর্তী আলেমদের আকীদাকে নবায়ন করবে এবং সে আকীদা থেকে
যারা বিচ্যূত হয়েছে তাদের বিভ্রান্তি অপনোদন করবে।
দ্বিতীয় অধ্যায়
তাওহীদের অর্থ ও এর
প্রকারভেদ
আত তাওহীদ:
তাওহীদ হচ্ছে সৃষ্টি ও সৃষ্টিজগতকে পরিচালনার কর্তৃপক্ষ
হিসাবে আল্লাহকে একক বলে স্বীকার করা, তাঁর জন্য একনিষ্ঠভাবে ইবাদাত করা, তিনি
ছাড়া অন্য যে কারোর ইবাদাত পরিত্যাগ করা এবং তাঁর যে সকল সুন্দর সুন্দর নাম ও মহান
গুণাবলী রয়েছে তা সাব্যস্ত করা আর তাঁকে সকল দোষ ও ত্রুটি থেকে পবিত্র ও মুক্ত রাখা। এ সংজ্ঞা অনুযায়ী তাওহীদ এর
তিনটি প্রকারই এতে শামিল রয়েছে। নিচে
এগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলঃ
- তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ
- তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ
- তাওহীদুল আসমা ওয়াস্-সিফাত
প্রথমতঃ তাওহীদুর
রুবুবিয়্যাহ এর আলোচনা
এতে রয়েছে নিম্নবর্ণিত
পরিচ্ছেদসমূহঃ
প্রথম পরিচ্ছেদঃ তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ এর অর্থ এবং এটি যে মানবস্বভাবজাতপ্রসূত এবং এর
প্রতি যে মুশরিকদের স্বীকৃতি ছিল তার বর্ণনা
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদঃ আল-কুরআন ও আস্-সুন্নায় ‘আর-রব’ শব্দটির অর্থ এবং রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে
পূর্ববর্তী বিভ্রান্ত জাতিসমূহের ধারণা ও তার অপনোদন
তৃতীয় পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর আনুগত্য নির্দেশ মানার ক্ষেত্রে সমস্ত জগতের বশ্যতা ও নতি স্বীকার
চতুর্থ পরিচ্ছেদঃ সৃষ্টি, জীবিকাপ্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ সাব্যস্ত করার
ব্যাপারে আল-কুরআনের নীতি
পঞ্চম পরিচ্ছেদঃ তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ যে অপরিহার্যভাবে তাওহীদুল উলুহিয়্যাকে শামিল করে
তার বর্ণনা
প্রথম পরিচ্ছেদ
তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ এর
অর্থ এবং এটি যে মানবস্বভাবজাতপ্রসূত এবং এর প্রতি যে মুশরিকদের স্বীকৃতি ছিল তার
বর্ণনা
সাধারণ অর্থে ‘‘তাওহীদ’’
হচ্ছে : আল্লাহ’ই একমাত্র রব এ আকীদা পোষণ করে তাঁর জন্য ইবাদাতকে খালিস ও একনিষ্ঠ
করা আর তাঁর সকল নামসমূহ ও সিফাতকে সাব্যস্ত করা। এ আলোকে তাওহীদ তিন প্রকারঃ
তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ, তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ, তাওহীদুল
আসমা ওয়াস্-সিফাত। এসব প্রকারের প্রত্যেকটিরই একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে যা আলোচনা করা
প্রয়োজন, যাতে করে এ প্রকারগুলোর মধ্যে পার্থক্যটা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ
তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ
হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলাকে তাঁর কাজের ক্ষেত্রে একক বলে মেনে নেওয়া। যেমন এ বিশ্বাস
করা যে তিনিই সকল
সৃষ্টিজগতের একমাত্র স্রষ্টা।
﴿ ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖۖ ﴾
আর এ বিশ্বাস করা যে, তিনি সকল প্রাণী, সকল মানুষের ও
অন্য সবকিছুর রিজিকদাতা।
﴿ ۞وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا
﴾ [هود: ٦]
আর এ বিশ্বাস করাও যে, তিনি সকল রাজত্বের মালিক, তিনি
সমগ্র জাহানের পরিচালক। তিনি শাসনক্ষমতা প্রদান করেন, ক্ষমতাচ্যুত করেন, তিনি মান
ইজ্জত দান করেন আবার অপমানও করেন। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। তিনি দিবস রজনীর
পরিক্রমন ঘটান। তিনি জীবিত করেন, তিনি মৃত্যু দান করেন।
﴿ قُلِ ٱللَّهُمَّ مَٰلِكَ ٱلۡمُلۡكِ تُؤۡتِي ٱلۡمُلۡكَ مَن تَشَآءُ
وَتَنزِعُ ٱلۡمُلۡكَ مِمَّن تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَآءُۖ
بِيَدِكَ ٱلۡخَيۡرُۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٢٦ تُولِجُ ٱلَّيۡلَ فِي
ٱلنَّهَارِ وَتُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِي ٱلَّيۡلِۖ وَتُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ
وَتُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّۖ وَتَرۡزُقُ مَن تَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٢٧
﴾ [ال عمران: ٢٦، ٢٧]
‘‘বলুন, হে আল্লাহ্, সার্বভৌম শক্তির মালিক! আপনি যাকে ইচ্ছা
রাজত্ব প্রদান করেন এবং যার নিকট হতে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নেন। যাকে ইচ্ছা
পরাক্রমশালী করেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনি হীন করেন। কল্যাণ আপনার হাতেই, নিশ্চয়ই আপনি
সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আপনিই রাত্রিকে দিবসে পরিণত করেন এবং দিবসকে
রাত্রিতে পরিণত করেন। আপনি মৃত হতে জীবন্তের উদ্ভব ঘটান
আবার জীবন্ত হতে মৃতের আবির্ভাব ঘটান। আর আপনি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান
করেন।’’[24]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা রাজত্ব এবং শক্তির ক্ষেত্রে
তাঁর কোন শরীক অথবা সহযোগী থাকাকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেমনিভাবে
তিনি সৃষ্টিকার্যে ও রিজিকপ্রদানের ক্ষেত্রেও তার কোন শরীক নেই বলে ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ هَٰذَا خَلۡقُ ٱللَّهِ فَأَرُونِي مَاذَا خَلَقَ ٱلَّذِينَ مِن
دُونِهِۦۚ ﴾ [لقمان: ١١]
‘‘এ হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্ট। অতএব তোমরা আমাকে দেখাও যে, তিনি ছাড়া আর
যারা রয়েছে তারা কি সৃষ্টি করেছে।’’[25]
তিনি আরো বলেন,
﴿ أَمَّنۡ هَٰذَا ٱلَّذِي يَرۡزُقُكُمۡ إِنۡ أَمۡسَكَ رِزۡقَهُۥۚ
﴾ [الملك: ٢١]
‘‘কে এই সত্ত্বা যে তোমাদেরকে রিযিক প্রদান করছেন, যদি
তিনি রিযিক প্রদান বন্ধ করে দেন?’’[26]
অন্যত্র তিনি সমগ্র
সৃষ্টিজগতের উপর তাঁর একক রুবুবিয়্যাতের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ ﴾ [الفاتحة: ٢]
‘‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব।’’[27]
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ
فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَ
يَطۡلُبُهُۥ حَثِيثٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتِۢ بِأَمۡرِهِۦٓۗ
أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤ ﴾ [الاعراف]
‘‘তোমাদের রব আল্লাহ, যিনি আকাশমণ্ডলী ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি
করেছেন। অত:পর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। তিনি দিবসকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যাতে
এদের একে অন্যকে দ্রুত গতিতে অনুসরণ করে, আর সূর্য-চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি তাঁরই
আজ্ঞাধীন করে তিনি সৃষ্টি করেছেন। জেনে রাখো, সৃজন ও আদেশ তাঁরই। মহিমময় সৃষ্টিকুলের
রব আল্লাহ।’’[28]
আল্লাহ সৃষ্টির সকলকে এমন স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন
যাতে তারা তাঁর রুবুবিয়্যাতের স্বীকৃতি প্রদান করে। এমনকি যে সকল মুশরিক ইবাদাতের
ক্ষেত্রে তাঁর শরীক করত তারাও স্বীকার করত যে, তিনি একমাত্র রব। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلۡ مَن رَّبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ ٱلسَّبۡعِ وَرَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡعَظِيمِ
٨٦ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٨٧
قُلۡ مَنۢ بِيَدِهِۦ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيۡءٖ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيۡهِ
إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٨٨ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ فَأَنَّىٰ تُسۡحَرُونَ ٨٩ ﴾ [المؤمنون : ٨٦، ٨٩]
‘‘বল, কে সপ্ত আকাশ ও মহা আরশের রব? তারা
বলবে, আল্লাহ। বল, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না? তুমি জিজ্ঞাসা কর, তিনি কে যার
হাতে সকল কিছুর কর্তৃত্ব, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যার উপর কোন আশ্রয়দাতা নেই, যদি
তোমরা জেনে থাকো? তারা বলবে, আল্লাহ। বল, তবুও তোমরা কেমন করে মোহগ্রস্ত হচ্ছো?’’[29]
এ হচ্ছে সে তাওহীদ যার বিপরীত প্রান্তে বনী আদমের পরিচিত
কোন দলই এখনো পর্যন্ত যায় নি। বরং এ তাওহীদের প্রতি স্বীকৃতি দানের স্বভাবসূলভ
তাড়না দিয়ে মানব হৃদয়কে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই জগতের অন্য কিছুর প্রতি স্বীকৃতি
দানের চেয়ে তাওহীদকে স্বীকৃতি দানের তাড়না মানব হৃদয়ে স্বভাবতই অনেক বেশী অনুভূত
হয়; যেমনটি আল্লাহর বাণীতে রাসূলগণের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে,
﴿ ۞قَالَتۡ رُسُلُهُمۡ أَفِي ٱللَّهِ شَكّٞ فَاطِرِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ
وَٱلۡأَرۡضِۖ﴾ [ابراهيم: ١٠]
‘‘তাদের রাসূলগণ বলেছিল যে, আল্লাহর ব্যাপারে কি কোন সন্দেহ আছে
যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা?’’[30]
আর যারা আল্লাহকে একমাত্র রব হিসেবে অস্বীকার করার
মাধ্যমে তাকে না জানার ভান করেছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে ফির‘আউন। অথচ
প্রকৃত কথা হচ্ছে এই যে, সেও ভেতরে ভেতরে আল্লাহকে রব হিসেবে বিশ্বাস করত। যেমন
মূসা আলাইহিস সালাম তাকে বলেছিলেন,
﴿قَالَ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَآ أَنزَلَ هَٰٓؤُلَآءِ إِلَّا رَبُّ
ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ﴾ [الاسراء: ١٠٢]
আল্লাহ তার সম্পর্কে এবং তার জাতি সম্পর্কে বলেছেন,
﴿وَجَحَدُواْ بِهَا وَٱسۡتَيۡقَنَتۡهَآ أَنفُسُهُمۡ ظُلۡمٗا وَعُلُوّٗاۚ﴾ [النمل : ١٤]
‘‘তারা অস্বীকার করেছে অথচ তাদের মন তার প্রতি বিশ্বাস রেখেছিল।
এটা তারা করেছে অবিচার ও অহংকারবশত।’’[32]
অনুরূপভাবে কমিউনিস্টদের মধ্য থেকে যারা আজ রবকে
অস্বীকার করে তারা অহংকারবশতই প্রকাশ্যে তাঁকে অস্বীকার করে থাকে। তারা
প্রকৃতপক্ষে গোপনে এ কথার স্বীকৃতি দেয় যে, যে কোন অস্তিত্বশীল বস্তুর অবশ্যই একজন
অস্তিত্বদানকারী রয়েছে এবং যে কোন সৃষ্ট বস্তুরই একজন স্রষ্টা অবশ্যই রয়েছে। আর যে
কোন ক্রিয়ার একজন ক্রিয়াশীল রয়েছেন। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿ أَمۡ خُلِقُواْ مِنۡ غَيۡرِ شَيۡءٍ أَمۡ هُمُ ٱلۡخَٰلِقُونَ
٣٥ أَمۡ خَلَقُواْ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۚ بَل لَّا يُوقِنُونَ ٣٦ ﴾ [الطور: ٣٤، ٣٥]
‘‘তারা কি
কোন কিছু ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে? নাকি তারাই স্রষ্টা? তারাই কি আসমানসমূহ ও যমীনকে
সৃষ্টি করেছে? বরং তারা দৃঢ়বিশ্বাস স্থাপন করে না।’’[33]
সমগ্র বিশ্বজগতের উপর-নিচ
প্রতিটি অংশ নিয়ে চিন্তা করুন, আপনি দেখতে পাবেন একজন স্রষ্টা, একজন মালিকের অস্তিত্ব।
সুতরাং বিবেক ও ফিতরাতের ক্ষেত্রে বিশ্বের স্রষ্টাকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করা
মূলত জ্ঞানকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করারই নামান্তর। এতদুভয়ের মধ্যে কোন
পার্থক্য নেই।[34]
আজ কমিউনিস্টরা রবের অস্তিত্ব অস্বীকার করার ব্যাপারে যে
সুর উচ্চকিত করছে এটি তারা করছে শুধুই অহংকারবশত এবং বিবেক ও সঠিক চিন্তার ফলাফল
এড়িয়ে গিয়ে। যারা এ অবস্থার মধ্যে রয়েছে তারা মূলত তাদের বিবেককে অকার্যকর করে
দিয়েছে এবং বিবেকের প্রতি উপহাস করার দিকে মানুষকে আহ্বান জানিয়েছে। কবি বলেন,
কিভাবে ইলাহকে অমান্য করা যায়?
এবং অস্বীকারকারী কিভাবে তাকে অস্বীকার করতে
পারে?
অথচ প্রতিটি বস্তুতেই রয়েছে তাঁর নিদর্শন
যা এ প্রমান বহন করছে যে তিনি একক।
[1] শারহুল-আকীদাহ্ আস্-সাফারিনিয়া ১/৪
[2] সূরা আল-কাহাফ: ১১০
[3] সূরা আয-যুমার: ৬৫
[4] সূরা আয-যুমার: ২-৩
[5] সূরা আন-নাহল: ৩৬
[7] সূরা আলে-ইমরান: ১০৩
[8] সূরা ত্ব-হা: ২৩
[9] হাদিসটি ইমাম আহমদ মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
[11] সূরা সা’বা: ১০-১৩
[12] মিনহাজুস সুন্নাহ আন-নাবাবিয়্যাহ ২/৩৯৮, মাদারিজুস
সালিকীন ১/৩৪৩, মুখতাসার সিরাত আর-রাসূল, মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ ১/৩৯
[13] সূরা আল বাকারাহ: ১৭০
[15] সূরা আল-কাসাস: ৭৮
[16] সূরা ফুসসিলাত:৫০
[17] সূরা আয-যুমার:৪৯
[18] সূরা আস-সাফফাত:৯৬
[19] সূরা আল-আ‘রাফ: ১৮৫
[20] সূরা ইবরাহীম: ৩২-৩৪
[21] সহীহ বুখারী,১৩৮৫ ও সহীহ মুসলিম, ৬৯২৮
[22] সূরা আয-যুমার: ৬২
[23] সূরা হুদ :৬
[24] সূরা আলে-ইমরান: ২৬-২৭
[25] সূরা লুকমান: ১১
[26] সূরা আল-মুলক: ২১
[27] সূরা ফাতিহা: ২
[28] সূরা আল-আ‘রাফ: ৫৪
[29] সূরা আল-মু’মিনুন: ৮৬-৮৯
[30] সূরা ইবরাহীম : ১০
[31] সূরা বনী ইসরাঈল : ১০২
[33] সূরা আস-সুর: ৩৫-৩৬
[34] কেননা বিশুদ্ধ সায়েন্স বা জ্ঞান স্রষ্টার অস্তিত্বকে
সাব্যস্ত করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন