বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৩

মন্তব্য প্রতিবেদন : সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রুখতে ইতিহাস জানা দরকার


মন্তব্য প্রতিবেদন : সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রুখতে ইতিহাস জানা দরকার
মাহমুদুর রহমান




বাঙালি মুসলমান অতীত খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যায় এবং মোটামুটিভাবে ইতিহাসবিমুখ জাতি বলেই আমার ধারণা। দেশের প্রধান দুটি দলের রাজনীতি চর্চার দিকে দৃষ্টিপাত করলে পাঠক আমার মন্তব্যের যথার্থতা বুঝতে পারবেন। ক্ষমতাসীনদের কথাটাই আগে বলি। আওয়ামী লীগের ইতিহাসবোধ এক ১৯৭১ সালেই আটকে আছে। শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ আর আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের সংকীর্ণ তত্ত্ব বা দর্শন অনুসারে দলীয় ভাবাদর্শের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাএই তিন বিষয়ের বাইরে যেন এই অঞ্চলের আর কোনো ইতিহাস নেই। সেই তত্ত্ব অনুযায়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির কোনো অবদান নেই, সবই নাকি এক ব্যক্তি যিনি আবার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, কেবল তারই ক্রিয়াকর্ম! অনিচ্ছাসহকারে ব্যক্তির বাইরে যদি যেতেই হয়, তাহলেও আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দলীয় বৃত্তের বাইরে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলে ১৯৫২ সালকে ভুলে যাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু আওয়ামী প্রচারণার কল্যাণে সেখানেও নির্লজ্জ ইতিহাস বিকৃতি। মহান ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা অনুল্লেখ্য হলেও তাকেই সে আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তিরূপে উপস্থাপন করার সে কী অসুস্থ, প্রাণান্তকর অপপ্রয়াস! অপর দল বিএনপি সর্বদা বর্তমান নিয়েই ব্যস্ত। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা এবং ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ সশস্ত্র বিদ্রোহের সূচনা প্রসঙ্গ চর্চায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিস্ময়কর অনীহা। ফলে আওয়ামী লীগের পক্ষে মিডিয়ার সহায়তাক্রমে শেখ মুজিবুর রহমানকেনায়কএবং জিয়াউর রহমানকেখলনায়ক’- পরিণত করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা পর্যন্ত অনেকাংশেই সফল হয়েছে। পাঠক আবার ভুলেও ভেবে বসবেন না, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে আধুনিক চিন্তা-চেতনার মাত্রাতিরিক্ত প্রসার ঘটার কারণেই তারা অতীত বাদ দিয়ে ভবিষ্যত্ পানে চেয়ে থাকে। এদের অধিকাংশের আধুনিকতা কেবল সানগ্লাস এবং সাফারি স্যুটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
ইনফরমেশন হাইওয়ের বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতির যুগে ২০০৬ পর্যন্ত মিডিয়ার প্রতি বিএনপির নীতিনির্ধারকদের বিস্ময়কর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে আমি বহুবার চমত্কৃত হয়েছি। জনমত গঠনে মিডিয়ার সামান্যই ভূমিকা, মিডিয়ার আনুকূল্য ছাড়াই বিএনপি নির্বাচনে জিততে সক্ষম, নীরব ভোটাররা আসল সময়ে আমাদের পক্ষেই থাকবে, ইত্যাকার হঠকারী, নির্বোধ মন্তব্য সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকাকালীন দলটির ডাকসাইটে নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে শোনার সৌভাগ্য আমার বহুবার হয়েছে। এক-এগারোর মহাবিপর্যয়ের পর ওইসব নেতার সম্ভবত আক্কেল দাঁত গজালেও এখনও প্রচারের মুন্সিয়ানায় তারা যে আওয়ামী লীগের যোজন যোজন পেছনে, সেটি বোঝার জন্য বিএনপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ঢুকলেই চলবে। মহাজোট সরকারের হিমালয়সম দুষ্কর্মের নির্ভরযোগ্য বিবরণী পাওয়া তো দূরের কথা, সাইটটিতে নিয়মিত আপডেটিং পর্যন্ত করা হচ্ছে না। শাহবাগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে যে প্রবল সাইবার যুদ্ধ চলছে, সেখানেও জাতীয়তাবাদের তরুণ সৈনিকদের অংশগ্রহণ একেবারেই অনুল্লেখ্য। লড়াই সীমাবদ্ধ রয়েছে আওয়ামী, বাম শিবিরের বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে। জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থক ছাত্র-যুবারা ঠিক কী ধরনের রাজনীতি চর্চা করে, তার কোনোরকম ধারণা আমার নেই।
বাস্তবতা হলো, আমাদের গণমাধ্যম কলকাতার বাবু-সংস্কৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে আষ্টেপৃষ্ঠে এই নিয়ন্ত্রণ সফলভাবে বজায় রাখার ফলে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় অদ্যাবধি বিকশিত হতে পারেনি। এদেশের অধিকাংশ মিডিয়ায় এমনভাবে প্রচার চালানো হয়েছে যাতে ইসলাম ধর্মের আচার-আচরণকে বাঙালিত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এক প্রকার বিজাতীয় সংস্কৃতিরূপে উপস্থাপন করা যায়। এদিক দিয়ে ভারতের কট্টর হিন্দু মৌলবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) প্রচারযন্ত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের মিডিয়ার উল্লেখযোগ্য অংশের আশ্চর্যজনক মিল খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। সরকারের সরাসরি আনুকূল্যে গত মাসের তারিখে শুরু হওয়া শাহবাগি আন্দোলন বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দিনের পর দিন ২৪ ঘণ্টা লাইভ দেখানো হয়েছে। টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংবাদ প্রচারের ধরন দেখে তাদের সকলকেই পেশাদার সাংবাদিকের চেয়ে বেশি শাহবাগি অ্যাকটিভিস্ট মনে হয়েছে। সেখানে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচির সময়ে টেলিভিশন ধারাভাষ্যকারদের আবেগমথিত কণ্ঠের বিবরণী শ্রবণে বাংলাদেশ যে অন্তত ৮৫ শতাংশ মুসলমান জনগোষ্ঠীর দেশ, তথ্য বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছিল।
শাহবাগ চত্বরে সেদিন কত লোকের সমাগম হয়েছিল! ২৫ হাজার, ৫০ হাজার, এক লাখ? সেই জনসমাগম ঢাকা শহরের অধিবাসীর কত শতাংশ? বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ইসলাম ধর্মপ্রচারক বিখ্যাত সুফিদের মাজারে প্রতি বছর ওরশ হয়। এখনও নানা অঞ্চলে পীরদের বার্ষিক মাহফিল হয়ে থাকে। সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম মাওলানা শফীর মতো ব্যক্তিরা প্রায় নব্বই বছর বয়সেও নিয়মিত ওয়াজ-মাহফিলে ইসলাম ধর্মের বয়ান করেন। কত লাখ মানুষের সমাগম হয় সেসব ধর্মীয় আলোচনা সভায়? আচ্ছা, এগুলো না হয় বাদই দিলাম। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় যে দেশ-বিদেশের অন্তত দশ লাখ মুসল্লি জমায়েত হন, এটা তো বোধহয় মিডিয়ার কর্ণধাররা মানবেন। আজ পর্যন্ত সব টেলিভিশন মিলে অন্তত একটি দিনের ২৪ ঘণ্টা লাইভ অনুষ্ঠান কি টঙ্গী ইজতেমা থেকে প্রচার করেছে? এই বৈষম্যের কারণ জানতে চাইলেই আমি জামায়াতে ইসলামী অথবা ইসলামী মৌলবাদী হয়ে যাব, তাই নয় কি? মিডিয়ার অনেক মূর্খই হয়তো জানেন না যে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে টঙ্গীর তাবলিগ জামাতের সম্পর্ক অনেকটা সাপে-নেউলের মতো। ইসলামী সংস্কৃতি বিদ্বেষের আরেকটা উদাহরণ দেয়া যাক।
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অলি আহাদ কিছুদিন আগে ইন্তেকাল করেছেন। গুণগ্রাহী, আত্মীয়-স্বজন এবং শুভানুধ্যায়ীরা মরহুম অলি আহাদের প্রতি সাধারণ জনগণের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুবিধার্থে শহীদ মিনারে তাঁর লাশ কয়েক ঘণ্টা রেখে সেখানে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। আর যায় কোথায়! ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারিত্বের আড়ালে ইসলামবিদ্বেষীরা গেল গেল রব তুলে চতুর্দিক প্রকম্পিত করে তুললেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী সংস্কৃতিকর্মী নাসিরউদ্দিন ইউসুফ গং ফতোয়া দিলেন, নামাজ পড়ার ফলে শহীদ মিনার একেবারে অপবিত্র হয়ে গেছে। তাদের বিবেচনায় ধর্মীয় কোনো আচার-আচরণ ওইধর্মনিরপেক্ষস্থানে পালন করা মহাপাপ! অথচ দিনের পর দিন মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানোতে, নানারকম মূর্তির আলপনা আঁকাতে, প্রবারণা পূর্ণিমা পালনে কোনো বাধা নেই। ভাগ্য ভালো যে, চিহ্নিত গোষ্ঠীটি গোবর জলে পুরো শহীদ মিনার ধুয়ে ফেলার বায়না করেননি। ইসলাম ব্যতীত সব ধর্মের প্রতি এসব আওয়ামী সমর্থকের পরম শ্রদ্ধা।
শেখ হাসিনারবড় ভাইএবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সাথী জেনারেল এরশাদের প্রতি আমার কোনো ব্যক্তিগত প্রীতি নেই। কিন্তু দিন আগে শাহবাগিদের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে এই সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ যে মন্তব্যটি করেছেন, তার সঙ্গে আমি অনেকটাই সহমত পোষণ করি। তিনি বলেছেন, কারো যদি ইসলাম ধর্ম ভালো না লাগে তাহলে সে যেন ধর্মান্তরিত হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যায়। কাউকে নিজের দেশ ছাড়ার অন্যায় দাবি করব না। তবে মুসলমান নামের সুবিধা গ্রহণ করে ইসলামের বিরুদ্ধে এই সার্বক্ষণিক প্রচারণা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সারা জীবন নাস্তিকতার আড়ালে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকে মৃত্যুর পর ঘটা করে জানাজা অনুষ্ঠান এবং ইসলামী রীতিতে কবর দেয়াও আমার দৃষ্টিতে জঘন্য ভণ্ডামি। থাবা বাবা ওরফে রাজীবের জানাজা নাটকের সমালোচনা করেননি আওয়ামী লীগের বাইরে এমন লোকের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
শহীদ মিনার সম্পর্কে আরও একটি কথা আছে। বাঙালিত্বকে যারা প্রায় ধর্মের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, তারা শহীদ মিনার নাম পরিবর্তনের দাবি কেন তুলছেন না, সেটাও আমার বোধের অগম্য। শহীদ এবং মিনার দুটোই তো আরবি শব্দ। ইসলামবিদ্বেষীদের কাছে আরবি শব্দ বিষবত্ পরিত্যাজ্য বলেই তো জানতাম। তার চেয়ে স্থাপনাটির নাম পাল্টে শহীদের পরিবর্তে আত্মবলিদান অথবা আত্মাহুতি এবং মিনারের পরিবর্তে বেদি বা স্তম্ভ দিলে ভালো হতো না কি?
বাংলাদেশের স্বাধীনতার তাত্পর্য বুঝতে হলে আমাদের অন্তত ১৭৫৭ সালে ফিরে যেতে হবে। বিশাল ভারত উপমহাদেশের পূর্ব অংশের শেষ স্বাধীন নৃপতি ছিলেন তরুণ নবাব সিরাজউদ্দৌলাহ্। অবশ্য তখনও দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে নবাবদের এক প্রকার অনুমোদন আনতে হতো। তবে মোগল সাম্রাজ্যের ক্ষয়িষ্ণু সময়ে সেই অনুমোদন আনুষ্ঠানিকতার অতিরিক্ত কিছু ছিল না। সব নবাবই দিল্লিকে বার্ষিক খাজনা প্রদানের বিনিময়ে স্বাধীনভাবেই রাজ্য চালাতেন। ব্রিটিশদের ভারত দখল এই বাংলা থেকেই ১৭৫৭ সালে শুরু হয়েছিল। মুর্শিদকুলি খানের সুবেদারিত্বের কালে ঢাকা রাজধানীর মর্যাদা হারালেও চারশবছরেরও অধিক পুরনো শহরটির প্রকৃত ধ্বংসসাধন করেছিল সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশরাই। বিজয়ী ঔপনিবেশিক শাসকদের সময়ে একসময়ের গণ্ডগ্রাম কলকাতার উত্থান হয়েছিল ঢাকাসহ পূর্ববঙ্গ থেকে লুণ্ঠিত সম্পদ ব্যয় করে। পলাশীর প্রান্তরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিজয়-পরবর্তী বেপরোয়া লুটপাট তত্কালীন বাংলাদেশে যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ডেকে নিয়ে আসে, সেটাই ইতিহাসে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর (১৭৬৯-৭০) নামে কুখ্যাতি পেয়েছে। সেই বিপর্যয় কাটিয়ে না উঠতেই ঢাকায় ১৭৮৪ এবং ১৭৮৮ সালে উপর্যুপরি দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ লোক মারা যায়। জঙ্গলাকীর্ণ ছোট তিনটি অখ্যাত গ্রাম, সুতানুটি-কলিকাতা-গোবিন্দপুর যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আনুকূল্যে ইউরোপীয় শহরের ধাঁচে দ্রুত গড়ে উঠছে, সেই একই সময়ে মোগল আমলের ঐতিহ্যমণ্ডিত বাংলার রাজধানী ঢাকা জনমানবশূন্য এক ভুতুড়ে স্থানে পরিণত হয়েছে।
লর্ড ক্লাইভ মুসলমান নবাবকে পরাজিত করতে সক্ষম হওয়ায় বাংলার অধিকাংশ হিন্দু জনগোষ্ঠী তাকে ত্রাতারূপে বরণ করে নিয়েছিল। ঐতিহাসিক এমএন রায় সঠিকভাবেই লিখেছেন, “It is historical fact that a large section of Hindu Community welcomed the advent of the English power.” (এটা ঐতিহাসিক সত্য যে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ ইংরেজ শক্তির আগমনকে স্বাগত জানিয়েছিল।) অপরদিকে ব্রিটিশ শাসনের প্রথম একশবছর মুসলমানরা অব্যাহতভাবে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে গেছে। মীর কাসিম, মজনু শাহ্, শমসের গাজী, আবু তোরাব, হাজী শরিয়তউল্লাহ, নুরলদীন, তিতুমীর, টিপু সুলতান, সাইয়েদ আহমেদ বেরেলভীসব রক্তরঞ্জিত গণবিদ্রোহের ইতিহাসের এক একটি গৌরবময় নাম। এদের বীরত্বগাথা আমাদের এতগুলো টেলিভিশন চ্যানেলের কোনিটতেই বা দেখানো হয়? ফলে সকল মহান দেশপ্রেমিক মুসলিম বিপ্লবীদের অধিকাংশই বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছেন। ১৮৫৭ সালে শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ্ জাফরের নেতৃত্বে সিপাহী বিপ্লব ব্যর্থ হলে মুসলমানদের শত বর্ষব্যাপী সংগ্রামের যবনিকা নেমে আসে। সেই মহান সিপাহী বিপ্লব চলাকালে ব্রিটিশের একনিষ্ঠ ভক্ত বাঙালি কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছিলেন :
চিরকাল হয় যেন ব্রিটিশের জয়।
ব্রিটিশের রাজলক্ষ্মী, স্থির যেন রয়।
বাংলার হিন্দুরা পলাশীর যুদ্ধ থেকে বঙ্গভঙ্গ পর্যন্ত প্রায় দেড়শবছর সোত্সাহে ব্রিটিশের পক্ষাবলম্বনই করেছে। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ব বাংলা এবং আসাম প্রদেশ গঠনের ঘোষণা করাতেই ব্রিটিশ বাঙালি হিন্দুর দীর্ঘদিনের সেই বন্ধুত্বে ভাঙন ধরে।
বঙ্গভঙ্গ রুখতে গিয়ে বাংলার বিক্ষুব্ধ হিন্দু জনগোষ্ঠীর আন্দোলন একসময় সর্বাত্মক ব্রিটিশবিরোধী সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে রূপ নেয়। বাংলার মুসলমানরা বঙ্গভঙ্গের পক্ষে থাকায় এই আন্দোলনে তারা নির্লিপ্ত থাকে। তাছাড়া বঙ্গভঙ্গ রোধ আন্দোলনের চরিত্রের মধ্যে মুসলমান স্বার্থবিরোধী হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত থাকায় মুসলমানদের পক্ষে যোগদান করার সুযোগও ছিল না। সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে দীক্ষা নিতে হলে কালী মন্দিরে গিয়ে বুক চিরে রক্ত দিয়ে পূজা-অর্চনা করা বাধ্যতামূলক ছিল। উপরন্তু চরম সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা আনন্দমঠেবন্দে মাতরমরণধ্বনি হিসেবে বিপ্লবীরা গ্রহণ করে। ফলে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম একশবছর তাদের বিরুদ্ধে যেভাবে মুসলমান জনগোষ্ঠী প্রধানত লড়াই করেছে, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির মতো করেই বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন কেবল হিন্দুদের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাঙালি মুসলমান ইতিহাসমনস্ক না হওয়ার কারণে ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন এমনকি পাঞ্জাবের ভগত্ সিংয়ের নাম এদেশের নবীন প্রজন্ম জানলেও তাদের মধ্যে কতজন শমসের গাজী, মজনু শাহ অথবা হাজী শরিয়তউল্লাহ্র নাম জানে, নিয়ে আমার অন্তত যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সন্তুষ্টি অর্জনে ব্রিটিশ সরকার শেষ পর্যন্ত ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়। এর মধ্য দিয়ে হিন্দুধর্মীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাময়িক বিজয় সাধিত হলেও অবধারিত ভারত বিভক্তির বীজ রোপিত হয়। ইতিহাসের বিচিত্র পটপরিবর্তনে যে হিন্দু সন্তান বঙ্গভঙ্গ রদ করার লক্ষ্যে ১৯০৫ সালে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছিল, তারাই ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগের পক্ষে অনমনীয় অবস্থান গ্রহণ করে।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকেসর অধ্যাপিকা . জয়া চ্যাটার্জি তার Bengal Divided (বাঙলা ভাগ হলো) গ্রন্থে লিখেছেন, “বাঙলা ভাগের যৌথ আন্দোলনে কংগ্রেস স্পষ্টতই ছিল অধিকতর অগ্রণী অংশীদার। আর বিভক্তির আন্দোলনে এর ভূমিকা (যাকে বলে নেতৃত্বের মর্যাদায়) হিন্দু মহাসভার সঙ্গে শুধু সহযোগিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সারা বাংলায় মহাসভা ছাড়াই কংগ্রেস স্বতন্ত্রভাবে বাঙলা ভাগের আহ্বান জানিয়ে জনসভার আয়োজন করে।” (অনুবাদ : আবু জাফর) ভারত বিভাগ সম্পর্কে গবেষণাধর্মী বইটির বাংলা সংস্করণের মুখবন্ধে জয়া চ্যাটার্জি আরও লিখেছেন, “১৯৮০ সালে আমি যখন গ্রন্থের জন্য গবেষণা শুরু করি তখন একটা সাধারণ অনুকূল ধারণা প্রচলিত ছিল যে, ভারত বা বাঙলার বিভক্তি মুসলমানদের কাজহিন্দুরা তাদের মাতৃভূমির অখণ্ডতাকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করতে কোনো কিছুই করেনি। সময়ে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি ধারণায় প্রকাশ পায় যে, স্বাভাবিক ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দুত্বের বৈশিষ্ট্য হলো সহনশীল এবং বহুত্ববাদী। তাই হিন্দুত্বে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতার সুযোগ নেই। তবে আমার গবেষণায় প্রচলিত সাধারণ তৃপ্তিদায়ক ধারণা তো নয়ই, বরং ভিন্ন তথ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
গবেষণায় প্রকাশ পায় যে, বাঙলার হিন্দু ভদ্রলোকদের (elites) ক্রম-ক্ষয়িষ্ণু ক্ষমতা, ধনসম্পদ মর্যাদা হুমকির সম্মুখীন হওয়ায় তারা সামাজিক অবস্থান অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে কূট-কৌশল অবলম্বন করে এবং নিজেদের কাজের যৌক্তিকতা হিসাবে বিভিন্ন ভাবাদর্শকে (idiologies) ব্যবহার করে। সত্যিকার অর্থে কূট-কৌশলকে একমাত্র সাম্প্রদায়িকতা হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায়।ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তন কেবল ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই সমাপ্ত হয়নি। ১৯৭১ সালে অনেক রক্তপাতের বিনিময়ে এই উপমহাদেশে আরও একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ-পরবর্তী পূর্ব বাংলা আসাম প্রদেশ থেকে আসাম বিযুক্ত হয়ে জন্ম নিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত সম্পর্কে কিছু তথ্য না দিলে আমার বিবেচনায় আজকের লেখাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে তার বিখ্যাতআমার সোনার বাংলাগান রচনা করেছিলেন। যে ঢাকাকেন্দ্রিক পূর্ব বাংলার বিরোধিতা করে গানটির সৃষ্টি, সেটিই পরবর্তীতে সেই পূর্ব বাংলা অর্থাত্ আজকের বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হয়েছে। এই বিচিত্র ঘটনাও বোধহয় নিয়তি দ্বারাই নির্ধারিত ছিল।
স্বাধীনতার
পর ৪২ বছর কেটে গেছে। এই সময়ের মধ্যে দুর্ভাগ্যবশত আমরা জাতি হিসেবে স্বাধীন দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সাংস্কৃতিক পরিচয় গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছি। বাঙালি এবং বাংলাদেশীর লড়াই নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণা-বিদ্বেষ এতখানি তীব্র করে তুলেছে যে রুয়ান্ডার হুতু-টুটসি বিরোধ পর্যন্ত হার মেনে যাচ্ছে। মহাজোট সরকারের সোয়া চার বছরের শাসনকালে রাষ্ট্রের ৮৫ শতাংশ নাগরিকের ধর্ম ইসলামকে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা বাঙালির প্রতিপক্ষ রূপে দাঁড় করানো হয়েছে। দুর্গাপূজা যেমন করে হিন্দু বাঙালির সংস্কৃতির অংশ, একইভাবে রোজা অথবা ঈদ বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতির অংশএই সত্য ভুলিয়ে দেয়ার সর্বব্যাপী আয়োজন চলছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আগে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি হলেও বাঙালিত্বের নামে আমাদের সেটি গ্রহণে তথাকথিত সেক্যুলার গোষ্ঠী রীতিমত বাধ্য করছে। ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে পূর্ববঙ্গের মানুষ প্রধানত ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিল বলেই পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। জনসংখ্যার ভারসাম্য উল্টো হলে তখনই পূর্ব বাংলা ভারতের অংশে পরিণত হতো। সেক্ষেত্রে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আর কোনো সুযোগ আমরা পেতাম না। এই ইতিহাস যারা বিস্মৃত হতে চান, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে তাদেরই প্রকৃত স্বাধীনতাবিরোধী আখ্যা দিতে হবে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে দালালি যেমন অসঙ্গত ছিল, আজ একইভাবে ভারতের রাজাকারী করাও গুরুতর অপরাধের মধ্যেই পড়ে। অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসীদের চিন্তা-চেতনা থেকে ইসলামিক ভাবাদর্শ দূর করতে পারলে আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তিমূলও যে দুর্বল হয়ে পড়বে বিষয়টি উপলব্ধি করেই জেনারেল জিয়াউর রহমান সংবিধানের মূল নীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে আল্লাহর প্রতি আস্থা বিশ্বাস প্রতিস্থাপন করেছিলেন। আজকের নবীন প্রজন্ম বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস এবং আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে নির্লিপ্ত থাকলে আশঙ্কা হয় তারা স্বাধীন দেশের নাগরিকের মর্যাদাটুকু বেশি দিন ধরে রাখতে পারবে না।
স্কুলজীবনে বাংলা উপন্যাস পড়ার হাতেখড়ি হয়েছিল শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়েররামের সুমতিদিয়ে। আমার কলেজের পাট চুকানোর আগেইশরত্ রচনাসমগ্রপুরোটা পড়া হয়ে গিয়েছিল। সে সময় তাকে কখনও সাম্প্রদায়িক লেখক ভাবতে মন সায় দেয়নি। অবশ্য শ্রীকান্ত উপন্যাসের প্রথম পর্বে যেখানে ইন্দ্রনাথের গল্প রয়েছে, সেখানে এক জায়গায়ইস্কুলের মাঠে বাঙালি মুসলমান ছাত্রদের ফুটবল ম্যাচলেখা দেখে বাল্য বয়সে চমকে উঠেছিলাম। তাহলে কি এই মহান সাহিত্যিকের দৃষ্টিতে বাঙালি অর্থ কেবলই বাঙালি হিন্দু? বাংলাদেশের মুসলমানরা কি ভিন্ন কোনো জাতি? পরবর্তীতে বঙ্গভঙ্গ নিয়ে ১৯২৬ সালে শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেয়া ভাষণ পড়ে আমার সব সন্দেহ ভঞ্জন হয়েছিল। এমন তীব্র মুসলিমবিদ্বেষ সম্ভবত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখাতেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। ১৯২৬ সালের বাঙালি হিন্দু মানসিকতা উপলব্ধি করার সুবিধার্থে বাংলা সাহিত্যের এক অসাধারণ কথাশিল্পী শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেই ভাষণের একটি অংশ উদ্ধৃত করছি,
বস্তুত মুসলমান যদি কখনও বলেহিন্দুর সহিত মিলন করিতে চাই, সে যে ছলনা ছাড়া আর কি হইতে পারে, ভাবিয়া পাওয়া কঠিন।
একদিন মুসলমান লুণ্ঠনের জন্যই ভারতে প্রবেশ করিয়াছিল, রাজ্য প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য আসে নাই। সেদিন কেবল লুট করিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই, মন্দির ধ্বংস করিয়াছে, প্রতিমা চূর্ণ করিয়াছে, নারীর সতীত্ব হানি করিয়াছে, বস্তুতঃ অপরের ধর্ম মনুষ্যত্বের উপরে যতখানি আঘাত অপমান করা যায়, কোথাও কোনো সঙ্কোচ মানে নাই।
১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন করে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু আস্থার সঙ্গে সহকর্মীদের বলেছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকলেও টিকতে পারে; কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের টেকার কোনো সম্ভাবনা নেই। নেহরু ধারণা করেছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা এবং দুই প্রদেশের জনগণের সাংস্কৃতিক ভিন্নতার কারণে একসময়ের পূর্ববঙ্গ বাংলা ভাষাভাষী পশ্চিম অংশের সঙ্গে মিলিত হয়ে বৃহত্ ভারতে লীন হয়ে যাবে। তার ধারণা আংশিক সত্যে পরিণত হয়েছে। আমরা পাকিস্তানকে বিদায় জানালেও স্বাধীনতা ত্যাগ করতে এখনও সম্মত হইনি। তবে নেহরু ডকট্রিন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অব্যাহত সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চলছে। চক্রান্তকারীরা ভালো করেই জানে যে, পূর্ব পশ্চিম বাংলার জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা বজায় থাকা অবস্থায় নেহরু ডকট্রিন বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশের মানুষের ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিচয় মুছে দেয়ার লক্ষ্যে এদেশের ক্ষমতাসীন মহল শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো করেই বাঙালি এবং মুসলমানকে পরস্পরের প্রতিপক্ষ রূপে দাঁড় করানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শাহবাগে সার্বক্ষণিক স্লোগান, ‘আমি কে তুমি কে, বাঙালি বাঙালি, প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কণ্ঠে বাংলাদেশের পরিবর্তে বাংলার গুণকীর্তন, সংসদে বাংলা বাঙালির বন্দনা, মিডিয়ায় বাঙালিত্ব প্রচারণার আড়ালে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সংস্কৃতির জয়গানএগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। পশ্চিমবঙ্গের কোনো টেলিভিশন চ্যানেলে হিন্দু ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানকে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করা না হলেও বাংলাদেশে একাত্তরের মুষ্টিমেয় রাজাকারের অপকর্ম উপলক্ষ করে ইসলামবিরোধী প্রচারণা এদেশের টেলিভিশনে, মঞ্চনাটকে দীর্ঘকাল ধরেই চলছে।
এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটেই আমার দেশ বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা এবং এদেশের জনগণের সুনির্দিষ্ট রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিক পরিচয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে। ধর্ম, ভাষা, লোকাচার মিলেমিশে আমাদের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয় সুস্পষ্ট করতে সক্ষম হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা পাবে, নেহরু ডকট্রিন পরাজিত হবে। ভারতীয় জেনারেলদের বাংলাদেশকে তাদের রাডারের মধ্যে বন্দী করে রাখার দুরাশাও তিরোহিত হবে। আনন্দের বিষয় হলোদেশের অধিকাংশ নাগরিক ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং আমার দেশ-এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কিছুসংখ্যক শহুরে এলিট, পুঁজিপতি গোষ্ঠী এবং মার্কিন-ভারতের দালাল তথাকথিত সুশীল (?) সমাজ ব্যতীত দেশের আপামর খেটে খাওয়া নিম্নবিত্ত কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক আমার দেশ-কে তাদের মুখপত্র রূপে গ্রহণ করেছেন। অনেকটা আকস্মিকভাবেই বাংলাদেশের সাধারণ জনগোষ্ঠী এক অনন্যসাধারণ সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেছেন। ইনশাল্লাহ, সেই বিপ্লবে দেশপ্রেমিক জনতার বিজয় অবশ্যম্ভাবী।
-মেইল : admahmudrahman@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন