শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৩

করুন কিংবা না করুন!!


অনুবাদ: আব্দুর রাকীব (মাদানী) | সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী

বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম
আমি এবং আপনি .. তিনি এবং সে .. অমুক এবং তমুক .. আমরা প্রত্যেকে এই জীবনে কিছু না কিছু করি …. হতে পারে আপনি এখন রুজি-রোজগারের তল্লাশে ব্যস্ত আছেন কিংবা খাওয়ার টেবিলে রুচিসম্পন্ন খাদ্য ভক্ষণ করছেন কিংবা নরম বিছানায় মধুর ঘুমে আচ্ছন্ন আছেন কিংবা সুস্বাস্থের উদ্দেশ্যে ব্যায়াম করছেন কিংবা সমুদ্র সৈকতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগের মাধ্যমে সাপ্তাহিক ছুটি কাটাচ্ছেন কিংবা কোন মসজিদে নামায আদায় করছেন কিংবা কুরআনের কিছু অংশ পড়ছেন কিংবা আল্লাহর যিক্ করছেন এর বিপরীতও হতে পারে!
হতে পারে প্রেম ভালবাসার হৈচৈ পূর্ণ গান শুনছেন ! কিংবা টেলিভিশনে অর্ধ নগ্ন নর্তকীদের দেখছেন ! কিংবা অন্য কিছু মন্দ কাজ করছেন .. হতে পারে ! যাই হোক না কেন , এসব কাজ আপনি করতে পারেন নাও করতে পারেন, অনুশীলন করতে পারেন আবার প্রত্যাখ্যানও করতে পারেন আপনি, কেবল আপনিই শুরু এবং শেষ সিদ্ধান্তের মালিক
তাই আপনি সানন্দে কাজে যেতে পারেন কিংবা নাও যেতে পারেন! খেতে পারেন কিংবা নাও খেতে পারেন ! অনুরূপ আপনার পুরো ইচ্ছাধীনে যে, আপনি নামায পড়তে পারেন আবার নাও পড়তে পারেন ! আল্লাহকে স্মরণ করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন ! নিকৃষ্ট কাজসমূহ করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন ! বর্ণিত প্রত্যেক বিষয়ের মালিক আপনি , আপনি এসব ব্যাপারে স্বাধীন আপনি এসব কাজ করতেও পারেন নাও পারেন
কিন্তু .. শুধু একটি কাজ এমন আছে , যা হবেই হবে বিষয়টি কিন্তু আগের চেয়ে ভিন্ন .. এটি করা এবং না করার স্বাধীনতা আপনার নেই ! বরং অবশ্যই এটা ঘটবে, আপনি তাতে সন্তুষ্ট থাকুন কিংবা অসন্তুষ্ট , চান বা না চান ! সেই অটল সত্যটি হচ্ছে যে, আপনাকে মরতে হবে !!
অত:পর অবশ্যই আপনাকে এক নতুন বাসস্থান এবং ভিন্ন জীবনে প্রত্যাবর্তন করতে হবে আপনার সেই নতুন বাসস্থানটি একটি সংকীর্ণ গর্ত ছাড়া কিছুই হবে না যা, কেবল আপনার দেহটাকে কোনরূপে সেখানে রাখা সম্ভব হবে তাছাড়া জানালা বিহীন, আলো বিহীন, এই স্থানটি কতই না অন্ধকার হবে! শুধু এতটুকুই নয় বরং উপর থেকে আপনার আপন লোক-জন , আত্মীয়-স্বজনরা নিষ্ঠুরের মত মাটি চাপিয়ে দিবে আর অজানা অচেনা লোকের মত আপনাকে সেখানে একা ফেলে রেখে নিজ নিজ বাড়ী ফিরবে যেন আপনি তাদের কেউই নন আপনি আর্তনাদ চিৎকার করে যদি তাদের ডাকতেও থাকেন, তারা শুনতে পাবে না আপনি শত চেষ্টা করলেও কাফনে জোড়ানো শরীরটাকে খুলে উঠে বসতে পারবেন না সেই ঘরে প্রচণ্ড গরমে ফ্যান বা এসির ব্যবস্থা থাকবে না ! এমনকি বাইরের একটু বাতাসও প্রবেশ করতে পারবে না আর না দারুণ ঠাণ্ডার দিনে লেপ-কাঁথার ব্যবস্থা থাকবে! আপনার আশে পাশে হবে বিশ্রী কদাকার পোকা-মাকড় যারা আপনার কাফনকে কুরে কুরে খেয়ে আপনার নরম গোশত-মাংস আঁচড়ে আঁচড়ে খাবে
এসবের পরেও আপনি জানেন না যে, আপনার সেই নতুন জীবনটা কেমন হবে? আপনি সৌভাগ্যবান হবেন না দুর্ভাগ্যবান! এটা আপনার ৎকাজের উপর নির্ভর করবে যা আপনি এর পূর্বের জীবনে করে ছিলেন অবশ্যই এটা ভয়ংকর ব্যাপার
তবে যেহেতু আপনি এই কথাগুলো পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন তার মানে আপনার হাতে নেক আমল করার এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ আছে তাই আসুন সুযোগ কাজে লাগাই কারণ এই জীবন তো কয় দিনের মাত্র তার পর হয়ত: লোকেরা বলবে: অমুক মারা গেছে .. দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে .. ( আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুক ).. দু-চার দিন হয়ত লোকেরা আপনার মৃত্যুতে আফসোস করবে তার পর ভুলে যাবে
তাই আসুন, এমন কাজ করি যা আল্লাহ পছন্দ করেন যেন আপনার নতুন গৃহের জীবনটা সৌভাগ্যের হয় আল্লাহর কসম! কারণ সেটাই আসল জীবন যদি সৌভাগ্যবান হন তবে চিরকাল সৌভাগ্যবান থাকবেন আর সতর্ক থাকুন যেন দুর্ভাগ্যবানদের মধ্যে গণ্য না হন কারণ সেটি সর্বনাশা !
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
মৃত ব্যক্তিকে যখন কবর দেওয়া হয়, তখন কাল বর্ণ নীল বর্ণ দুইজন ফেরেশতা আসে একজনের নাম মুনকার অপর জনের নাম নাকীর তারা মৃত ব্যক্তিকে কে জিজ্ঞেসকরবে : এই লোকটির সম্পর্কে (পৃথিবীতে) তুমি কি বলেছিলে? সে বলবে: ইনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা রাসূল দুই ফেরেশতা বলবে : আমরা জানি যা তুমি বলেছিলে অত:পর তার কবর দৈর্ঘ্য প্রস্থে ৭০ গজ সম্প্রসারিত করে তা আলোয় আলোকিত করে দেওয়া হবে তার পর বলা হবে : ঘুমিয়ে পড় সে বলবে: আমার পরিবারের কাছে গিয়ে তাদের খবর দিতে চাই ফেরেশতা বলবে: বাসর ঘরের সদ্য বিবাহিত বরের মত ঘুমাও যাকে তার একান্ত আপন জনই ঘুম থেকে জাগাবে সে এই অবস্থাতেই থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ তাকে পুনরুত্থান না করেন আর যদি মৃত ব্যক্তি মুনাফেক হয় তাহলে সে বলবে: লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম আসলে কি তা জানি না ফেরেশতা বলবে : আমরা জানতাম যা তুমি বলতে অত:পর মাটিকে আদেশ করা হবে : জোড়া লেগে যাও মাটি মিলে যাবে যার কারণে মৃতের পাঁজরের হাড় চাপে এদিক ওদিক হয়ে যাবে এই ভাবে তার শাস্তি হতে থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ তাঁকে পুনরায় না ওঠান
[ হাদীস হাসান, সহীহুল জামে নং ৭২৪] QuranerAlo.com - কুরআনের আলো ইসলামিক ওয়েবসাইট


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন