মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৩

ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কোন ছেলেকে কুরবানী দিয়েছিলেন?



ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কোন ছেলেকে কুরবানী দিয়েছিলেন?
শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ


অনুবাদ ও সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কোন ছেলেকে কুরবানী দিয়েছিলেন?
প্রশ্ন: আমি জানি যে, মুসলিম বিশ্বাস মতে নবী ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম তার ছেলে নবী ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে কুরবানী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একজন অমুসলিম, যার সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়েছে, তিনি উল্লেখ করলেন যে, ব্যাপারাটা কুরআনে বলা নেই।
ব্যাপারটা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে মনে হল যে, কোন ছেলেকে কুরবানী করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সে ব্যাপারে কুরআনের ৩৭ নম্বর সূরার বর্ণনায় অস্পষ্টতা রয়েছে (আমার কাছে যে ইংরেজী অনুবাদটা আছে, সেটা অনযায়ী)।
দয়া করে নবী ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম এবং তিনি যে কুরবানী করতে চেয়েছিলেন, সে ব্যাপারে মুসলিমদের অবস্থান দলীল-প্রমাণ সহকারে ব্যাখ্যা করুন।

উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তাঁর বান্দা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম সম্বন্ধে বলেন,
﴿ وَقَالَ إِنِّي ذَاهِبٌ إِلَىٰ رَبِّي سَيَهۡدِينِ ٩٩ رَبِّ هَبۡ لِي مِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٠٠ فَبَشَّرۡنَٰهُ بِغُلَٰمٍ حَلِيمٖ ١٠١ فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ ٱلسَّعۡيَ قَالَ يَٰبُنَيَّ إِنِّيٓ أَرَىٰ فِي ٱلۡمَنَامِ أَنِّيٓ أَذۡبَحُكَ فَٱنظُرۡ مَاذَا تَرَىٰۚ قَالَ يَٰٓأَبَتِ ٱفۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُۖ سَتَجِدُنِيٓ إِن شَآءَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٠٢ فَلَمَّآ أَسۡلَمَا وَتَلَّهُۥ لِلۡجَبِينِ ١٠٣ وَنَٰدَيۡنَٰهُ أَن يَٰٓإِبۡرَٰهِيمُ ١٠٤ قَدۡ صَدَّقۡتَ ٱلرُّءۡيَآۚ إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٠٥ إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ ٱلۡبَلَٰٓؤُاْ ٱلۡمُبِينُ ١٠٦ وَفَدَيۡنَٰهُ بِذِبۡحٍ عَظِيمٖ ١٠٧ وَتَرَكۡنَا عَلَيۡهِ فِي ٱلۡأٓخِرِينَ ١٠٨ سَلَٰمٌ عَلَىٰٓ إِبۡرَٰهِيمَ ١٠٩ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١١٠ إِنَّهُۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١١١ وَبَشَّرۡنَٰهُ بِإِسۡحَٰقَ نَبِيّٗا مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١١٢ وَبَٰرَكۡنَا عَلَيۡهِ وَعَلَىٰٓ إِسۡحَٰقَۚ وَمِن ذُرِّيَّتِهِمَا مُحۡسِنٞ وَظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ مُبِينٞ ١١٣ ﴾ [الصافات: ٩٩،  ١١٣]  :
৯৯. আর সে বলল (আগুন থেকে তার উদ্ধার হওয়ার পরে):"নিশ্চয়ই আমি আমার প্রভুর কাছে যাচ্ছি। তিনিই আমাকে দিক নির্দেশনা দেবেন।"
১০০. "হে আমার প্রভু! আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন।"
১০১. "সুতরাং আমরা তাকে সহনশীল পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিলাম।"
১০২. এবং যখন সে (ছেলেটি) তার সাথে হাঁটার মত বড় হলো, তখন সে বললো, "হে আমার পুত্র! আমি একটা স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবাই করছি (আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য কুরবানী করছি)। তাহলে তুমি কি মনে কর!" সে বলল, "হে আমার পিতা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ্, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।"
১০৩. তারপর তারা উভয়ে নিজেদেরকে (আল্লাহর ইচ্ছার কাছে) সমর্পণ করল, এবং সে তাকে তার কপালের উপর সেজদারত অবস্থায় শুইয়ে দিল(অথবা কাত করে পাশের উপর শুইয়ে দিল);
১০৪. আমরা তাঁকে বললাম, "হে ইব্‌রাহীম!
১০৫. তুমি তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছো!" নিশ্চয়ই এভাবেই আমরা মুহসিন(সৎকর্মশীল) বান্দাদের পুরস্কৃত করি।
১০৬. নিশ্চয়ই ওটা ছিল স্পষ্ট পরীক্ষা।
১০৭. এবং আমরা তাকে একটা বড় কুরবানী দিয়ে (অর্থাৎ একটা ভেড়া দিয়ে) মুক্ত করেছি।
১০৮. এবং এটা আমরা পরবর্তী প্রজন্মগুলোর স্মরণে রেখেছি।
১০৯. "ইব্রাহীমের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।"
১১০. এভাবেই আমরা মুহসিন বান্দাদের পুরস্কৃত করে থাকি।
১১১. নিশ্চয়ই সে আমাদের বিশ্বাসী বান্দাদের একজন ছিল।
১১২. এবং আমরা তাকে ইসহাকের ব্যাপারে সুসংবাদ দিলাম - সৎকর্মশীলদের মাঝে থেকে একজন নবী হিসেবে।
১১৩. আমরা তাকে এবং ইসহাককে বরকত দান করলাম এবং তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক নিজেদের মধ্যে স্পষ্ট যুলুমকারী। [সূরা আস-সাফফাত, ৩৭ : ৯৯-১১৩]
আয়াতসমূহের তাফসীরে ইমাম ইবনে কাসীর বলেন:
আল্লাহ আমাদের বলেন যে, তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম যখন তার পিতৃভূমি থেকে হিজরত করলেন, তখন তিনি তার প্রভুর কাছে চেয়েছিলেন যে, তিনি যেন তাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করেন। তাই আল্লাহ তাকে একজন ধৈর্যশীল পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। এটা ছিল ইসমাঈল আলাইহিস সালামের ব্যাপারে; কেননা তিনি ছিলেন ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালামের ঔরসে জন্ম নেয়া প্রথম সন্তান। এ ব্যাপারে বিভিন্ন দ্বীনের (ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান ও মুসলিম) অনুসারীদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই যে ইব্রাহীমের ঘরে ইসমাঈলই প্রথম জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
"এবং যখন সে তার সাথে হাঁটার মত বড় হল" এর অর্থ হচ্ছে, যখন সে বড় হয়েছিল এবং তার বাবার মতই নিজেই নিজের দেখাশোনা করতে পারত। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, "এবং যখন সে তার সাথে হাঁটার মত বড় হল" - এর অর্থ হচ্ছে, যখন সে বড় হয়ে উঠেছিল এবং বাহনে চড়তে পারত, হাঁটতে পারত এবং তার বাবার মত কাজ করতে পারত। এরকম একটা অবস্থা যখন আসল, তখন ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম স্বপ্নে দেখলেন যে, তাকে তার ছেলেকে কুরবানী করার আদেশ দেয়া হচ্ছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক মারফূ‘ হাদীসে এসেছে,
«رُؤْيَا الأَنْبِيَاءِ وَحْيٌ»
"নবীদের স্বপ্ন হচ্ছে ওহী[1]।"
সুতরাং আল্লাহ তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে, তার প্রিয়পুত্রকে কুরবানী করার আদেশ দিয়ে পরীক্ষা করছিলেন যে পুত্রকে তিনি তার বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছিলেন এবং তারপর শিশু অবস্থায় তাকে এবং তার মাকে মরুভূমিতে রেখে আসার আদেশ পেয়েছিলেন, এমন একটা উপত্যকায় যেখানে কোন জনপ্রাণীর সাড়াশব্দ ছিল না, কোন মানুষজন ছিল না, কোন বৃক্ষরাজি ছিল না এবং কোন পশুও ছিল না। ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর আদেশ পালন করলেন এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে তাদেরকে সেখানে রেখে আসলেন। আর আল্লাহ তাদের জন্য অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে রিযিক পাঠালেন। এত কিছুর পরেও, তার ঘরে প্রথম জন্ম নেয়া ও তার একমাত্র পুত্রকে কুরবানী করার জন্য যখন আদেশ করা হল, তিনি তখন তার প্রভুর ডাকে সাড়া দিলেন এবং তার প্রভুর আদেশ মেনে, তিনি যা চেয়েছিলেন, তা করতে উদ্যত হলেন। তাই তিনি তার পুত্রকে ব্যাপারটা সম্বন্ধে বললেন - যেন সে শান্ত থাকে এবং জোর করে তাকে কুরবানী করতে না হয়। তিনি বললেন,
"হে আমার পুত্র!  আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবাই করছি (আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য কুরবানী করছি)। তাহলে, তুমি কি মনে কর!"
ধৈর্যশীল ছেলেটি সাথে সাথেই জবাব দিল: " সে বলল, 'হে আমার পিতা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।' " সে সবচেয়ে উত্তম জবাবটিই দিয়েছিলতার পিতার প্রতি এবং মানবকুলের প্রভুর প্রতি বাধ্যতার তা এক উদাহরণ। আল্লাহ তা‘আলা বললেন:
"তারপর তারা উভয়ে নিজেদেরকে (আল্লাহর ইচ্ছার কাছে) সমর্পণ করল, এবং সে তাকে তার কপালের উপর সেজদারত অবস্থায় শুইয়ে দিল (অথবা তার কপালের পাশের উপর শুইয়ে দিল);"
এখানে বলা হয়েছে, "যখন তারা উভয়ে নিজেদেরকে সমর্পণ করল" এর অর্থ হচ্ছে তারা দুজনে যখন নিজেদের আল্লাহর আদেশের কাছে সমর্পণ করল। "এবং সে তাকে শুইয়ে দিল" এর অর্থ হচ্ছে তিনি, তাকে (ছেলেকে) মাটির দিকে মুখ করে রাখলেন। এখানে বলা হল যে, তিনি তাকে পেছন থেকে যবেহ করতে চাইলেন, যেন তিনি যবেহ করার সময় তার মুখটা দেখতে না পান। এটা ছিল ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু, মুজাহিদ (রহ.), সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ.), কাতাদা (রহ.) এবং আদ-দাহহাক (রহ.) এর মত।
"তারা উভয়ে নিজেদের সমর্পণ করল" - এর অর্থ হচ্ছে ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" এবং "আল্লাহু আকবার" আর ছেলেটি বললো, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" - কেননা সে মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছিল। আস-সুদ্দী এবং অন্যান্যরা বলেন যে ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম ছেলেটির গলদেশে ছুরি চালান, কিন্তু তা তাকে কাটে নি। এটা বলা হয়ে থাকে যে, একটা তামার পাত ছুরি ও তার গলার মাঝখানে রাখা হয়েছিল, আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
আর তখনই আল্লাহ তাকে ডেকে বললেন, "হে ইব্‌রাহীম! তুমি তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছো!" এর অর্থ হচ্ছে, উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে, তোমাকে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তোমার প্রভু তোমাকে যে আদেশ করেছেন, তা পালন করার ব্যাপারে তোমার ইচ্ছা ও আনুগত্য প্রমাণিত হয়েছে। তোমার পুত্রের পরিবর্তে বিকল্প কুরবানীর ব্যবস্থা করা হবে - যেমনভাবে তুমি তোমার নিজের শরীরকে আগুনের শিখায় সমর্পণ করেছিলে এবং তোমার অতিথিদের সম্মান জানাতে তোমার সম্পদ খরচ করেছিলে, তা স্মরণ রেখে। তাই আল্লাহ বলেন:
"নিশ্চয়ই এটা ছিল স্পষ্ট পরীক্ষা" অর্থাৎ এটা যে একটা পরীক্ষা ছিল তা একদম পরিষ্কার।
আর আল্লাহর বাণী, "আমরা তাকে একটা বড় কুরবানী দিয়ে মুক্ত করলাম" এর অর্থ হচ্ছে আমরা তার ছেলের মুক্তিপণের ব্যবস্থা করলাম, তার পরিবর্তে যবেহ করার জন্য বিকল্প হিসেবে যা সহজ তিনি করেছিলেন। বেশিরভাগ স্কলারের মতে এটা ছিল শিং বিশিষ্ট খুব সুন্দর সাদা একটা ভেড়া। আস-সাওরী আব্দুল্লাহ ইবনে উসমান ইবনে খাইসাম, সাঈদ ইবনে জুবায়ের হয়ে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, "এটা ছিল এমন একটা ভেড়া যা চল্লিশ বছর ধরে জান্নাতে বেড়িয়েছে।"
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে এরকম বর্ণনাও এসেছে যে ঐ ভেড়ার শুকনো মাথাটা এখন কাবা শরীফের ছাদের [পানি নির্গমনের] পাইপ থেকে ঝুলে রয়েছে। কেবল এটা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যাকে কুরবানী করার কথা ছিল, তিনি ছিলেন ইসমাঈল আলাইহিস সালাম - কেননা তিনি মক্কায় বসবাস করতেন এবং আমরা এমন কখনো শুনি নি যে ইসহাক আলাইহিস সালাম তার ছেলেবেলায় কখনো মক্কায় এসেছিলেন, আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
(ইবনে কাসীরের আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/১৫৭-১৫৮ দেখুন)
সুতরাং স্পষ্ট হলো যে, যাকে কুরবানী করার কথা ছিল তিনি ইসহাক নন বরং তিনি ছিলেন ইসমাঈল, তার কারণগুলো আমরা উপরে বর্ণনা করেছি। ইবনে কাসীর তার তাফসীরে এই সকল আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বেশ কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করেন, যা প্রমাণ করে যে, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম-এরই কুরবানী হওয়ার কথা ছিল। সেই পয়েন্টগুলো এরকম:
·         ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ছিলেন তার প্রথম সন্তান, যার ব্যাপারে ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালামকে সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল। মুসলিম ও আহলে কিতাবগণের ইজমা (ঐক্যমত্য) অনুসারে তিনি হলেন ইসহাক আলাইহিস সালাম-এর চেয়ে বড়। আহলে কিতাবগণের কিতাবসমূহে এটা বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালামকে তার একমাত্র পুত্র কুরবানী দিতে আদেশ দিয়েছিলেন এবং কোন কোন কপিতে আছে যে, তাকে তার প্রথম জন্ম নেয়া ছেলেকে কুরবানী দিতে বলা হয়েছিল।
·         সাধারণত প্রথম ছেলে অন্যদের চেয়ে বেশী প্রিয় হয়ে থাকে, আর তাই তাকে কুরবানী করার আদেশ পরীক্ষার জন্য অধিকতর উপযোগী।
·         এটা উল্লিখিত রয়েছে যে, এক ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল এবং তাকেই কুরবানী করার কথা ছিল। এর পরে একই অধ্যায়ে বলা হয়েছে: "এবং আমরা তাকে ইসহাকের সুসংবাদ দিলাম..." যখন ফেরেশতারা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কাছে ইসহাকের সুসংবাদ নিয়ে আসলেন, তারা বললেন, ﴿ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَٰمٍ عَلِيمٖ ٥٣ ﴾ [الحجر: ٥٣]  "আমরা আপনাকে একটি জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি।" (সূরা হিজর, ১৫ : ৫৩)
·         আল্লাহ আরো বলেন: "কিন্তু আমরা তাকে (সারাকে) ইসহাকের সুসংবাদ দিলাম এবং তার পরে ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম।" (সূরা হুদ, ১১ : ৭১) এর অর্থ হচ্ছে এই যে, ইয়াকুব বলে একজন শিশুর জন্ম হবে তাদের (সারা এবং ইসহাকের) জীবদ্দশায় এবং তার থেকে অনেক বংশ বিস্তার লাভ করবে এবং এটা সঠিক শোনায় না যে, ইব্‌রাহীমকে সেই ইসহাককেই কুরবানী করতে বলা হবে যখন তিনি ছোট ছিলেন তখন, কেননা আল্লাহ অঙ্গীকার করেছেন যে তার অনেক বংশধর থাকবে।
·         এখানে সূরা সাফফাতে ইসমাঈলকে ধৈর্যশীল বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যা কিনা এই পটভূমিতে যথার্থ। (তাফসীর ইবনে কাসীর ৪/১৫) আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কোন ছেলেকে কুরবানী দিয়েছিলেন?
প্রশ্ন: আমি জানি যে, মুসলিম বিশ্বাস মতে নবী ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম তার ছেলে নবী ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে কুরবানী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একজন অমুসলিম, যার সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়েছে, তিনি উল্লেখ করলেন যে, ব্যাপারাটা কুরআনে বলা নেই।
ব্যাপারটা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে মনে হল যে, কোন ছেলেকে কুরবানী করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সে ব্যাপারে কুরআনের ৩৭ নম্বর সূরার বর্ণনায় অস্পষ্টতা রয়েছে (আমার কাছে যে ইংরেজী অনুবাদটা আছে, সেটা অনযায়ী)।
দয়া করে নবী ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম এবং তিনি যে কুরবানী করতে চেয়েছিলেন, সে ব্যাপারে মুসলিমদের অবস্থান দলীল-প্রমাণ সহকারে ব্যাখ্যা করুন।
উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তাঁর বান্দা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম সম্বন্ধে বলেন,
﴿ وَقَالَ إِنِّي ذَاهِبٌ إِلَىٰ رَبِّي سَيَهۡدِينِ ٩٩ رَبِّ هَبۡ لِي مِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٠٠ فَبَشَّرۡنَٰهُ بِغُلَٰمٍ حَلِيمٖ ١٠١ فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ ٱلسَّعۡيَ قَالَ يَٰبُنَيَّ إِنِّيٓ أَرَىٰ فِي ٱلۡمَنَامِ أَنِّيٓ أَذۡبَحُكَ فَٱنظُرۡ مَاذَا تَرَىٰۚ قَالَ يَٰٓأَبَتِ ٱفۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُۖ سَتَجِدُنِيٓ إِن شَآءَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٠٢ فَلَمَّآ أَسۡلَمَا وَتَلَّهُۥ لِلۡجَبِينِ ١٠٣ وَنَٰدَيۡنَٰهُ أَن يَٰٓإِبۡرَٰهِيمُ ١٠٤ قَدۡ صَدَّقۡتَ ٱلرُّءۡيَآۚ إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٠٥ إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ ٱلۡبَلَٰٓؤُاْ ٱلۡمُبِينُ ١٠٦ وَفَدَيۡنَٰهُ بِذِبۡحٍ عَظِيمٖ ١٠٧ وَتَرَكۡنَا عَلَيۡهِ فِي ٱلۡأٓخِرِينَ ١٠٨ سَلَٰمٌ عَلَىٰٓ إِبۡرَٰهِيمَ ١٠٩ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١١٠ إِنَّهُۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١١١ وَبَشَّرۡنَٰهُ بِإِسۡحَٰقَ نَبِيّٗا مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١١٢ وَبَٰرَكۡنَا عَلَيۡهِ وَعَلَىٰٓ إِسۡحَٰقَۚ وَمِن ذُرِّيَّتِهِمَا مُحۡسِنٞ وَظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ مُبِينٞ ١١٣ ﴾ [الصافات: ٩٩،  ١١٣]  :
৯৯. আর সে বলল (আগুন থেকে তার উদ্ধার হওয়ার পরে):"নিশ্চয়ই আমি আমার প্রভুর কাছে যাচ্ছি। তিনিই আমাকে দিক নির্দেশনা দেবেন।"
১০০. "হে আমার প্রভু! আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন।"
১০১. "সুতরাং আমরা তাকে সহনশীল পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিলাম।"
১০২. এবং যখন সে (ছেলেটি) তার সাথে হাঁটার মত বড় হলো, তখন সে বললো, "হে আমার পুত্র! আমি একটা স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবাই করছি (আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য কুরবানী করছি)। তাহলে তুমি কি মনে কর!" সে বলল, "হে আমার পিতা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ্, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।"
১০৩. তারপর তারা উভয়ে নিজেদেরকে (আল্লাহর ইচ্ছার কাছে) সমর্পণ করল, এবং সে তাকে তার কপালের উপর সেজদারত অবস্থায় শুইয়ে দিল(অথবা কাত করে পাশের উপর শুইয়ে দিল);
১০৪. আমরা তাঁকে বললাম, "হে ইব্‌রাহীম!
১০৫. তুমি তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছো!" নিশ্চয়ই এভাবেই আমরা মুহসিন(সৎকর্মশীল) বান্দাদের পুরস্কৃত করি।
১০৬. নিশ্চয়ই ওটা ছিল স্পষ্ট পরীক্ষা।
১০৭. এবং আমরা তাকে একটা বড় কুরবানী দিয়ে (অর্থাৎ একটা ভেড়া দিয়ে) মুক্ত করেছি।
১০৮. এবং এটা আমরা পরবর্তী প্রজন্মগুলোর স্মরণে রেখেছি।
১০৯. "ইব্রাহীমের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।"
১১০. এভাবেই আমরা মুহসিন বান্দাদের পুরস্কৃত করে থাকি।
১১১. নিশ্চয়ই সে আমাদের বিশ্বাসী বান্দাদের একজন ছিল।
১১২. এবং আমরা তাকে ইসহাকের ব্যাপারে সুসংবাদ দিলাম - সৎকর্মশীলদের মাঝে থেকে একজন নবী হিসেবে।
১১৩. আমরা তাকে এবং ইসহাককে বরকত দান করলাম এবং তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক নিজেদের মধ্যে স্পষ্ট যুলুমকারী। [সূরা আস-সাফফাত, ৩৭ : ৯৯-১১৩]
আয়াতসমূহের তাফসীরে ইমাম ইবনে কাসীর বলেন:
আল্লাহ আমাদের বলেন যে, তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম যখন তার পিতৃভূমি থেকে হিজরত করলেন, তখন তিনি তার প্রভুর কাছে চেয়েছিলেন যে, তিনি যেন তাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করেন। তাই আল্লাহ তাকে একজন ধৈর্যশীল পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। এটা ছিল ইসমাঈল আলাইহিস সালামের ব্যাপারে; কেননা তিনি ছিলেন ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালামের ঔরসে জন্ম নেয়া প্রথম সন্তান। এ ব্যাপারে বিভিন্ন দ্বীনের (ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান ও মুসলিম) অনুসারীদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই যে ইব্রাহীমের ঘরে ইসমাঈলই প্রথম জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
"এবং যখন সে তার সাথে হাঁটার মত বড় হল" এর অর্থ হচ্ছে, যখন সে বড় হয়েছিল এবং তার বাবার মতই নিজেই নিজের দেখাশোনা করতে পারত। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, "এবং যখন সে তার সাথে হাঁটার মত বড় হল" - এর অর্থ হচ্ছে, যখন সে বড় হয়ে উঠেছিল এবং বাহনে চড়তে পারত, হাঁটতে পারত এবং তার বাবার মত কাজ করতে পারত। এরকম একটা অবস্থা যখন আসল, তখন ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম স্বপ্নে দেখলেন যে, তাকে তার ছেলেকে কুরবানী করার আদেশ দেয়া হচ্ছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক মারফূ‘ হাদীসে এসেছে,
«رُؤْيَا الأَنْبِيَاءِ وَحْيٌ»
"নবীদের স্বপ্ন হচ্ছে ওহী[2]।"
সুতরাং আল্লাহ তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে, তার প্রিয়পুত্রকে কুরবানী করার আদেশ দিয়ে পরীক্ষা করছিলেন যে পুত্রকে তিনি তার বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছিলেন এবং তারপর শিশু অবস্থায় তাকে এবং তার মাকে মরুভূমিতে রেখে আসার আদেশ পেয়েছিলেন, এমন একটা উপত্যকায় যেখানে কোন জনপ্রাণীর সাড়াশব্দ ছিল না, কোন মানুষজন ছিল না, কোন বৃক্ষরাজি ছিল না এবং কোন পশুও ছিল না। ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর আদেশ পালন করলেন এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে তাদেরকে সেখানে রেখে আসলেন। আর আল্লাহ তাদের জন্য অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে রিযিক পাঠালেন। এত কিছুর পরেও, তার ঘরে প্রথম জন্ম নেয়া ও তার একমাত্র পুত্রকে কুরবানী করার জন্য যখন আদেশ করা হল, তিনি তখন তার প্রভুর ডাকে সাড়া দিলেন এবং তার প্রভুর আদেশ মেনে, তিনি যা চেয়েছিলেন, তা করতে উদ্যত হলেন। তাই তিনি তার পুত্রকে ব্যাপারটা সম্বন্ধে বললেন - যেন সে শান্ত থাকে এবং জোর করে তাকে কুরবানী করতে না হয়। তিনি বললেন,
"হে আমার পুত্র!  আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবাই করছি (আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য কুরবানী করছি)। তাহলে, তুমি কি মনে কর!"
ধৈর্যশীল ছেলেটি সাথে সাথেই জবাব দিল: " সে বলল, 'হে আমার পিতা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।' " সে সবচেয়ে উত্তম জবাবটিই দিয়েছিলতার পিতার প্রতি এবং মানবকুলের প্রভুর প্রতি বাধ্যতার তা এক উদাহরণ। আল্লাহ তা‘আলা বললেন:
"তারপর তারা উভয়ে নিজেদেরকে (আল্লাহর ইচ্ছার কাছে) সমর্পণ করল, এবং সে তাকে তার কপালের উপর সেজদারত অবস্থায় শুইয়ে দিল (অথবা তার কপালের পাশের উপর শুইয়ে দিল);"
এখানে বলা হয়েছে, "যখন তারা উভয়ে নিজেদেরকে সমর্পণ করল" এর অর্থ হচ্ছে তারা দুজনে যখন নিজেদের আল্লাহর আদেশের কাছে সমর্পণ করল। "এবং সে তাকে শুইয়ে দিল" এর অর্থ হচ্ছে তিনি, তাকে (ছেলেকে) মাটির দিকে মুখ করে রাখলেন। এখানে বলা হল যে, তিনি তাকে পেছন থেকে যবেহ করতে চাইলেন, যেন তিনি যবেহ করার সময় তার মুখটা দেখতে না পান। এটা ছিল ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু, মুজাহিদ (রহ.), সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ.), কাতাদা (রহ.) এবং আদ-দাহহাক (রহ.) এর মত।
"তারা উভয়ে নিজেদের সমর্পণ করল" - এর অর্থ হচ্ছে ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" এবং "আল্লাহু আকবার" আর ছেলেটি বললো, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" - কেননা সে মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছিল। আস-সুদ্দী এবং অন্যান্যরা বলেন যে ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালাম ছেলেটির গলদেশে ছুরি চালান, কিন্তু তা তাকে কাটে নি। এটা বলা হয়ে থাকে যে, একটা তামার পাত ছুরি ও তার গলার মাঝখানে রাখা হয়েছিল, আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
আর তখনই আল্লাহ তাকে ডেকে বললেন, "হে ইব্‌রাহীম! তুমি তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছো!" এর অর্থ হচ্ছে, উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে, তোমাকে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তোমার প্রভু তোমাকে যে আদেশ করেছেন, তা পালন করার ব্যাপারে তোমার ইচ্ছা ও আনুগত্য প্রমাণিত হয়েছে। তোমার পুত্রের পরিবর্তে বিকল্প কুরবানীর ব্যবস্থা করা হবে - যেমনভাবে তুমি তোমার নিজের শরীরকে আগুনের শিখায় সমর্পণ করেছিলে এবং তোমার অতিথিদের সম্মান জানাতে তোমার সম্পদ খরচ করেছিলে, তা স্মরণ রেখে। তাই আল্লাহ বলেন:
"নিশ্চয়ই এটা ছিল স্পষ্ট পরীক্ষা" অর্থাৎ এটা যে একটা পরীক্ষা ছিল তা একদম পরিষ্কার।
আর আল্লাহর বাণী, "আমরা তাকে একটা বড় কুরবানী দিয়ে মুক্ত করলাম" এর অর্থ হচ্ছে আমরা তার ছেলের মুক্তিপণের ব্যবস্থা করলাম, তার পরিবর্তে যবেহ করার জন্য বিকল্প হিসেবে যা সহজ তিনি করেছিলেন। বেশিরভাগ স্কলারের মতে এটা ছিল শিং বিশিষ্ট খুব সুন্দর সাদা একটা ভেড়া। আস-সাওরী আব্দুল্লাহ ইবনে উসমান ইবনে খাইসাম, সাঈদ ইবনে জুবায়ের হয়ে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, "এটা ছিল এমন একটা ভেড়া যা চল্লিশ বছর ধরে জান্নাতে বেড়িয়েছে।"
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে এরকম বর্ণনাও এসেছে যে ঐ ভেড়ার শুকনো মাথাটা এখন কাবা শরীফের ছাদের [পানি নির্গমনের] পাইপ থেকে ঝুলে রয়েছে। কেবল এটা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যাকে কুরবানী করার কথা ছিল, তিনি ছিলেন ইসমাঈল আলাইহিস সালাম - কেননা তিনি মক্কায় বসবাস করতেন এবং আমরা এমন কখনো শুনি নি যে ইসহাক আলাইহিস সালাম তার ছেলেবেলায় কখনো মক্কায় এসেছিলেন, আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
(ইবনে কাসীরের আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/১৫৭-১৫৮ দেখুন)
সুতরাং স্পষ্ট হলো যে, যাকে কুরবানী করার কথা ছিল তিনি ইসহাক নন বরং তিনি ছিলেন ইসমাঈল, তার কারণগুলো আমরা উপরে বর্ণনা করেছি। ইবনে কাসীর তার তাফসীরে এই সকল আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বেশ কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করেন, যা প্রমাণ করে যে, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম-এরই কুরবানী হওয়ার কথা ছিল। সেই পয়েন্টগুলো এরকম:
·         ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ছিলেন তার প্রথম সন্তান, যার ব্যাপারে ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালামকে সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল। মুসলিম ও আহলে কিতাবগণের ইজমা (ঐক্যমত্য) অনুসারে তিনি হলেন ইসহাক আলাইহিস সালাম-এর চেয়ে বড়। আহলে কিতাবগণের কিতাবসমূহে এটা বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ ইব্‌রাহীম আলাইহিস সালামকে তার একমাত্র পুত্র কুরবানী দিতে আদেশ দিয়েছিলেন এবং কোন কোন কপিতে আছে যে, তাকে তার প্রথম জন্ম নেয়া ছেলেকে কুরবানী দিতে বলা হয়েছিল।
·         সাধারণত প্রথম ছেলে অন্যদের চেয়ে বেশী প্রিয় হয়ে থাকে, আর তাই তাকে কুরবানী করার আদেশ পরীক্ষার জন্য অধিকতর উপযোগী।
·         এটা উল্লিখিত রয়েছে যে, এক ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল এবং তাকেই কুরবানী করার কথা ছিল। এর পরে একই অধ্যায়ে বলা হয়েছে: "এবং আমরা তাকে ইসহাকের সুসংবাদ দিলাম..." যখন ফেরেশতারা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কাছে ইসহাকের সুসংবাদ নিয়ে আসলেন, তারা বললেন, ﴿ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَٰمٍ عَلِيمٖ ٥٣ ﴾ [الحجر: ٥٣]  "আমরা আপনাকে একটি জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি।" (সূরা হিজর, ১৫ : ৫৩)
·         আল্লাহ আরো বলেন: "কিন্তু আমরা তাকে (সারাকে) ইসহাকের সুসংবাদ দিলাম এবং তার পরে ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম।" (সূরা হুদ, ১১ : ৭১) এর অর্থ হচ্ছে এই যে, ইয়াকুব বলে একজন শিশুর জন্ম হবে তাদের (সারা এবং ইসহাকের) জীবদ্দশায় এবং তার থেকে অনেক বংশ বিস্তার লাভ করবে এবং এটা সঠিক শোনায় না যে, ইব্‌রাহীমকে সেই ইসহাককেই কুরবানী করতে বলা হবে যখন তিনি ছোট ছিলেন তখন, কেননা আল্লাহ অঙ্গীকার করেছেন যে তার অনেক বংশধর থাকবে।
·         এখানে সূরা সাফফাতে ইসমাঈলকে ধৈর্যশীল বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যা কিনা এই পটভূমিতে যথার্থ। (তাফসীর ইবনে কাসীর ৪/১৫) আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।


[1] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৬৮৯।
[2] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৬৮৯।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন